উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার আলাদা হওয়ার কারণ যা জানলে অবাক হবেন আপনিও

১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়ার দক্ষিণে আক্রমণ চালায়, এবং দেশের অধিকাংশ দখল করে ফেলে। ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে জাতিসংঘ বাহিনী দক্ষিণকে রক্ষা করার জন্য উত্তর কোরিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। তারা চীনের সীমান্ত পেরিয়ে গেলে চীনের সৈন্যরা উত্তর কোরিয়ায় হস্তক্ষেপ করে, আবার যুদ্ধের ভারসাম্য বদল হয়। যুদ্ধের সমাপ্তি জুলাই ২৭,১৯৫দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সুপারপাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঠাণ্ডা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির অপ্রত্যাশিত ফলাফল হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভক্ত হয়ে আছে, শুধু বিভক্ত হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, চলেছে নানা উত্তেজনা এবং তা কখনো কখনো যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।

একটা সময় যখন উত্তর দক্ষিন কোরিয়ার অস্তিত্ব ছিল না, ছিলনা কোন মিলিটারি ডিমারকেশন লাইন। কোরিয়া মূলত রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল, ১৩৯২ সালে জেসন রাজবংশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোরিয়া একক রাজতান্ত্রিক সম্রাজ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতিতে কোরিয়রা অত্যন্ত একক এবং ঐক্যবদ্ধ ছিল।

১৯১০ সাল থেকে কোরীয় উপদ্বীপ জাপানের দখলে ছিল। ১৯৪৫ সালের ৯ই আগস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং কোরিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুদ্ধ ঘোষণা ইয়াল্টা কনফারেন্সে মিত্ররা সম্মতি দিয়েছিল, তবে মার্কিন সরকার সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণের অধীনে থাকা সমস্ত কোরিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিল। মার্কিন সরকার তাই সোভিয়েত বাহিনীকে ৩৮তম সমান্তরাল উত্তর অক্ষাংশে তাদের অগ্রগতি স্থগিত করতে অনুরোধ করে, রাজধানী সিওলসহ উপদ্বীপের দক্ষিণের অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে যায়। আগস্টের ১৫ তারিখে জাপানের আত্মসমর্পণের পর জাপানী বাহিনীর জেনারেল অর্ডার নং ১ এ এটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২৪ আগস্ট, রেড আর্মি পিয়ংইয়ংয়ে প্রবেশ করে এবং সমান্তরালভাবে উত্তর কোরিয়াতে একটি সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। মার্কিন বাহিনী ৮ সেপ্টেম্বর দক্ষিণে অবতরণ করে এবং কোরিয়াতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

১৯৪৮ সালো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপদ্বীপের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য সকল কোরিয়ানদের জন্য জাতিসংঘপোষিত ভোটের আহ্বান জানায়। কিন্তু এতে কোরিয়ার উত্তর অংশ(বর্তমান উত্তর কোরিয়া) অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এর ফলে দক্ষিণ অংশ ( বর্তমান দক্ষিণ কোরিয়া ) সিউলে তারা কমিউনিস্ট বিরোধী সিংম্যান রি-এর নেতৃত্বে তাদের নিজস্ব শক্তিশালী সরকার গঠন করে ।

অপরদিকে বিরোধী কমিউনিস্ট পার্টির সিংমান রি নির্বাচনে জিতবার পরও কিম ইল-সাং কে উত্তর কোরিয়ার দিকপাল হিসেবে নিয়োগ দেয় জোসেফ স্টালিন। ফলে উত্তর অংশ ( উত্তর কোরিয়া ) পিয়ংইয়ং গঠন করে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অফ কোরিয়া (ডিপিআরকে) এবং প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন সাবেক কমিউনিস্ট গেরিলা কিম ইল সাংক ।
৩ সালে ঘটে, একটি যুদ্ধবিরতি সাথে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মূল সীমানা পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। সিংমান-রি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, কিন্তু অনিচ্ছাকৃতভাবে এটি মেনে চলতে সম্মত হন। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর একটি আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি শুরু করেছিল কিন্তু তা শান্তি চুক্তির দিকে অগ্রসর হয়নি।এটি কোরিয়ান ড্যামিলিটাইটিজড জোন প্রতিষ্ঠা করে, দুই পক্ষের মধ্যে একটি বাফার জোন, যা ৩৮ তম সমান্তরালটি ছেদ করেছিল কিন্তু এটি অনুসরণ করেনি। উত্তর কোরিয়া অন্তত ছয়বার ঘোষণা করেছে যে ১৯৯৪, ১৯৯৬, ২০০৩, ২০০৬, ২০০৯ এবং ২০১৩ সালে তারা অস্ত্রবিরতি মেনে চলবে না।

যুদ্ধের ফলে বিপুল সংখ্যক লোক বাস্তুচ্যুত হয় এবং পুনর্নির্মাণকৃত সীমানা দ্বারা অনেক পরিবারকে বিভক্ত করা হয়। ২০০৭ সালে এটি অনুমান করা হয়েছিল যে প্রায় ৭৫০,০০০ লোক তাৎক্ষণিক পরিবারের সদস্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, এবং পরিবার পুনমিলনের জন্য দক্ষিণকে কূটনৈতিক অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

এদিকে, উত্তর কোরিয়া একটি বিচ্ছিন্ন “আইসোলেটেড কান্ট্রি” হিসেবেই রয়ে গেছে। বিশেষ করে ১৯৯০-এর পর সোভিয়েত ব্লকের পতনের হয় এবং এতে উত্তর কোরিয়া মোটামুটি সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়াও এক প্রকার বন্ধ হয়ে যায়।যার ফলে উত্তর কোরিয়া হয়ে ওঠে অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত, এবং বিচ্ছিন্ন একটি দেশ যা একই সাথে তিন প্রজন্ম ধরে একটি একক পরিবার দ্বারা শাসিত হয়ে আসছে ।
পাশাপাশি পারমাণবিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে পশ্চিমাদের রোষানলে পরে দিন দিন অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া ।

দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের অধীনে কূটনীতিতে সাম্প্রতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ২০১৮ সালের শীতকালীন অলিম্পিক গেমসের প্রাক্কালে দুই কোরিয়ার মধ্যে তীব্র পার্থক্যপূর্ণ অবস্থা প্রদর্শিত হয়েছে। এমনকি যখন দক্ষিণ কোরিয়ানরা সারা বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের শীতকালীন গেমসে স্বাগত জানাতে শুরু করে, তখন উত্তরে কিম জং উনের শাসকরা পিয়ংইয়ং-এর ঐতিহাসিক কিম ইল সাং স্কোয়ারে একটি সামরিক প্যারেড করে।
সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির চারটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র হোয়াওয়ং-১৫ প্যারেডে প্রদর্শিত হচ্ছিল, যখন কিম বারান্দা থে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সুপারপাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঠাণ্ডা যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির অপ্রত্যাশিত ফলাফল হিসেবে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভক্ত হয়ে আছে, শুধু বিভক্ত হয়েই ক্ষান্ত হয়নি, চলেছে নানা উত্তেজনা এবং তা কখনো কখনো যুদ্ধের রূপ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *