অবহেলিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে নারীরা

রংপুরে তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। নামমাত্র শ্রম ও স্বল্প ব্যয়ে বাড়তি আয়ের আশায় এবার জেলাজুড়ে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন তারা। এখানের বিশাল মাঠজুড়ে এখন শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখীর হলুদ ফুল। আর দৃষ্টিনন্দন এমন দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। গত কয়েক বছর ধরে এখানে ধারাবাহিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ বেড়েছে। গত বছর রংপুরের ১৪০ হেক্টর জমি প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়। এ বছর জেলার পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলায় ৫০০ কৃষককে সূর্যমুখী চাষে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৫০ জন নারীও রয়েছেন। এর ফলে তারাও এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২১-২২ অর্থবছরের ‘তেল ফসল’ প্রকল্পের আওতায় এবার জেলার ১৮০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বীজস্বল্পতার কারণে কৃষি বিভাগের সহায়তায় মাত্র ৬৭ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ করে ৯-১০ মণ ফলন পাওয়া যায়, যা বিক্রি করে আয় হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিন মাসমেয়াদি এ ফসলে লাভ বেশি হলেও বীজের সরবরাহ কম থাকায় সূর্যমুখীর আবাদ ব্যাপক হারে বাড়ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

পীরগঞ্জ উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের নারী কৃষক মিনারা বেগম এবার কৃষি বিভাগের পরামর্শে ৫০ শতক পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় অন্য নারীরাও এখন সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে মিনারা বেগমের দেখাদেখি অনেক নারী বাড়ির আঙিনা ও অন্যান্য স্থানে শখের বসে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছেন।

পীরগঞ্জের শানেরহাট ইউনিয়নের রাউতপাড়া গ্রামের কৃষক হায়বাতুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। এতে মোট খরচ হয়েছে ১৮ হাজার টাকার মতো। ফসল বিক্রি করে ৩৮ থেকে ৪০ হাজার টাকা পাব বলে আশা করছি।’

রংপুর সদর উপজেলার হরিদেবপুর ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামের কৃষক সেকেন্দার আলী ৫০ শতক জমিতে প্যাটার্নভিত্তিক হাইসান ৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রণোদনা হিসেবে ২ কেজি বীজ ও কিছু সার দেয়া হয়েছে।

সেকেন্দার আলী বলেন, ফলন ভালো হওয়ায় সূর্যমুখী-আউশ-রোপা-আমন প্যাটার্নভুক্ত ৫০ শতাংশ জমি থেকে এবার প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করতে পারলে লাভ আরও বেশি হবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (শস্য) মাহাবুবার রহমান জানান, সূর্যমুখীর আবাদ করতে নভেম্বরের প্রথমার্ধে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও বাড়তি খরচ ছাড়াই সূর্যমুখী চাষ সম্ভব। সূর্যমুখীর গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায় এবং এর তেল মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।

এ তেলবীজ আবাদে ব্যয়ের তুলনায় কয়েক গুণ লাভ হয়। কৃষকদের সহায়তার জন্য বীজ সরবরাহসহ উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে তাদের অর্থ দেয়া হয় বলেও জানান মাহাবুবার রহমান।

More From Author

যুদ্ধের অবসানে চীন এখন মধ্যস্থতায় কেন আগ্রহী

আবারও হ্যাট্রিক করলেন রোনালদো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *