বাবা ইউক্রেনে, মা রাশিয়ায়, মেয়ে লন্ডনে

ঠিক এক বছর আগে কিয়েভে যাওয়ার কথা ছিল তানিয়া মিলসের। বাবাকে দেখবেন, বিয়ের পোশাক কিনবেন। সে যাওয়া আর হলো না।

গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। সে যুদ্ধের ৩৬৫ তম দিন আজ। এই এক বছরে ইউক্রেনীয় বাবাকে দেখেননি তানিয়া। মা রুশ হলেও তার দেখা পান কালেভদ্রে।

বিবিসিকে তানিয়া বলেন, ‘সব বদলে গেছে। এখন প্রতিটা দিন কাটে উদ্বেগে। প্রত্যেক দিন ভাবি, কেউ মেসেজ পাঠিয়ে বলবে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা পেরিয়ে গেছে।’

এই যুদ্ধের কোনো মানে দেখেন না তানিয়া। কোনোদিন মেনেও নেবেন না বলে জানিয়েছেন। এই যুদ্ধ তার মা-বাবাকে আলাদা করেছে, তাকেও বিচ্ছিন্ন করেছে তাদের কাছ থেকে।

তানিয়া বেড়ে ওঠেন মস্কোয়। ২০২০ সাল থেকে থাকেন লন্ডনে। স্নাতকোত্তরের জন্য এসে আর ফিরে যাননি। তার মা এখন চাইলেও ভিসা জটিলতায় রাশিয়া ছাড়তে পারছেন না।

জীবন তো আর থেমে থাকে না। স্বাভাবিক জীবনজাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তানিয়া। গত গ্রীষ্মে বিয়ে করেছেন। বলেন, ‘বাবা-মা ছাড়া সেটা অত্যন্ত দুঃখের ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি হাজির হই শ্বশুরের সঙ্গে। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে মা ভিডিও কলে ছিলেন। পরে বাবাকে বিয়ের ফুটেজ পাঠিয়ে দিয়েছি।’

প্রতিদিন মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন তানিয়া। সে চেষ্টা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বাবার ওখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। আর মার নিরাপত্তা-শঙ্কায় নিয়মিত যোগাযোগ করেন না তানিয়া। ফোনে কথা বলার সময় শব্দচয়ন করতে হয় অনেকে ভেবেচিন্তে। সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু বললেই বিপদ।

গত সেপ্টেম্বরে শেষবার মাকে দেখেছেন তানিয়া। বাবাকে এরপর কবে দেখবেন, জানেন না। আর এক বছরের বেশি হলো তার বাবা-মা একে অপরকে দেখেন না।

রুশ পাসপোর্টধারী হলেও নিজেকে রাশিয়ান কিংবা ইউক্রেনীয় বলতে পারেন না তিনি। কোনোদিন রাশিয়ায় ফিরে যাবেন বলেও মনে করেন না।

এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নন তানিয়া। একসময় যাদের বন্ধু ভাবতেন, তাদের কাছ থেকেই হুমকি-ধামকি হুমকি পেয়েছেন। বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটা হতাশাজনক যে আমার পাসপোর্ট কোনো কাজের না। আমি সবাইকে বলতে চাই, রাশিয়ান পাসপোর্ট থাকলেই কাউকে শাস্তি কিংবা নিষেধাজ্ঞার আওতায় ফেলা উচিৎ না।’

এখন নতুন সংসার আর চাকরি নিয়ে দিন কেটে যাচ্ছে তানিয়ার। তবে বাবা-মার কথা মন থেকে একটুর জন্যও সরাতে পারেন না। বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যান, জানি না আবার কবে একে অপরকে দেখতে পাবেন।’

More From Author

ছয় বছর পর দিয়াজ হত্যা মামলার প্রতিবেদন

জুয়ার প্রচারণার অভিযোগে ইউটিউবার প্রত্যয় হিরণসহ তার দুই সহযোগী গ্রেপ্তার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *