বেলুনগুলো ওদের জন্য

আজ ওরা নেই। নিষ্ঠুর পৃথিবীর ভাষা বুঝে ওঠার আগেই ওদের নির্মম মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছে। বেঁচে থাকলে আজ হয়তো মায়ের কোলে কিংবা ভাইবোনের সঙ্গে খেলনা, বেলুন নিয়ে মারামারি করত কিংবা চকলেটের জন্য আবদার করত বাবার কাছে।

তুরস্কের হাতায় প্রদেশে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা প্রায় অর্ধলাখের কাছাকাছি। এদের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিশু। এই নিষ্পাপ শিশুগুলোর স্মরণে উদ্ধারকর্মীরা ভেঙে পড়া দালানগুলোতে ঝুলিয়ে দিয়েছেন অসংখ্য রঙিন বেলুন।

এত এত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ধসে পড়া ঘরবাড়িগুলো থেকে যে, উদ্ধারকর্মীরাও রীতিমতো মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন।

ফটোগ্রাফার ওগুন সিভার ওকুরের নেতৃত্বে উদ্ধারকর্মীরা এই বেলুন লাগানোর কাজগুলো করেন। ওকুর বলেন, ‘এই নিষ্পাপ শিশুগুলোকে আমরা আর কখনোই কিছু দিতে পারব না। তাই তাদের জন্য শেষ উপহার এই বেলুনগুলো। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় দেড় হাজার বেলুন ঝুলিয়েছি ভেঙে পড়া অবকাঠামোগুলোর মধ্যে। বিশ্বাস করুন, প্রত্যেকবার বেলুন ঝোলানোর সময় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এ অঞ্চলের প্রতিটি এলাকায় গিয়ে আমরা বেলুন ঝোলাব আমাদের শিশুদের জন্য।’

ভূমিকম্পের পরদিন থেকেই দুই সন্তানের বাবা ওকুর স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। প্রথমে নিজ শহর আদানা এবং তারপর ২০০ কিলোমিটার দূরে আনতাকিয়ায় যান। একটি বাড়ি দেখিয়ে ওকুর বলেন, এই বাড়িতে তিনটি শিশু ছিল। ‘একজনের বয়স ছয় মাস, একজনের চার বছর, আরেকজনের ছয়। এদের কাউকে আমরা জীবিত উদ্ধার করতে পারিনি। এই ছোট্ট শিশুগুলোর চেহারা ভেবে কয়েক রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।’

গত কয়েক বছর ধরেই ওকুর একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে খাবার ও খেলনা বিতরণ, অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা-সহায়তা করে আসছিলেন।

ভূমিকম্পের আট দিন পর থেকে ওকুর ভেঙে পড়া দালানগুলোর লোহার রডের সঙ্গে লাল রঙের বেলুন বেঁধে দিতে শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘লাল বেলুন হলো আনন্দ, ভালোবাসার প্রতীক। কিন্তু আনতাকিয়া শহরে এই প্রথম বেলুনগুলো আমাদের কাঁদাল।’

সূত্র বিবিসি

More From Author

শহীদ দিবসে ইউআইটিএসের শ্রদ্ধা

বইমেলায় বিদ্যানন্দের অন্য রকম বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *