ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেছেন, তার সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে রাজধানীর কালশী ফ্লাইওভার এবং ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী হয়ে মিরপুর পর্যন্ত ছয় লেনের সড়ক উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে ফ্লাইওভার ও সড়কের উদ্বোধনের পর কালশী বালুর মাঠে আয়োজিত জনসভায় সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলবো। সরকার জনগণের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।’
জনসভায় তিনি মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলনে গৌরবময় অবদানের কারণে হারুন মোল্লার নামে কালশী ফ্লাইওভারের নামকরণের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য ও চমৎকার সবুজে ভরা একটি দেশ। ফুল, ফল, পাখির অত্যন্ত সৌন্দর্যে ভরা এই দেশটিকে আমরা সেভাবেই গড়ে তুলবো। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়বো এবং ঢাকা সিটিও স্মার্ট সিটি হবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেজন্য বহু পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় আছি বলেই বাংলাদেশকে আজ উন্নত করতে পেরেছি। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছি এবং এই মর্যাদাকে ধরে রেখেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আগামীর বাংলাদেশ হবে ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।’
ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা হলো এর পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ভালো সংযোগ না থাকা, বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার রাজধানীর এই অংশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসিবি স্কয়ার থেকে ২ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার কালশী ফ্লাইওভার এবং ৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও ছয় লেনের রাস্তা মিরপুর, ডিওএইচএস, পল্লবী, কালশী, মহাখালী, মানিকদি, মাটিকাটা, ভাষানটেক, বনানী, উত্তরা এবং বিমানবন্দর এলাকার যোগাযোগ সহজ করবে। মেট্রোরেলের পর কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক চালু হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে।’
ঢাকা উত্তর সিটির উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১১ সালে ঢাকা শহরকে দুই ভাগ করার পর গত ১২ বছরে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ২৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে গত কয়েক বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের ১৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর সৌন্দর্যায়ন, পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়ন, সড়ক, সেতু ও ফ্লাইওভারের পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীর যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়েছে।’
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী কালশী বালুর মাঠকে একটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সেখানে শিশু ও যুবকদের খেলার মাঠ এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচলের জন্য হাঁটার পথ থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
দেশের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন কালশী ফ্লাইওভারটি ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো। এটি নির্মাণে ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়। ১ হাজার ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বিএনসিসি ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
প্রকল্পের আওতায় এলাকার আগের চার লেন বিশিষ্ট রাস্তাগুলোকে প্রসারিত করে ছয় লেন করা হয়েছে। প্রধান চার লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি ইসিবি স্কয়ার থেকে কালশী ও মিরপুরের ডিওএইচএস হয়ে গেছে। দুই লেন বিশিষ্ট র্যাম্পটি কালশী মোড় থেকে শুরু হয়ে কালশী সড়কে নেমেছে।
প্রকল্পটির আওতায় একটি পিসি গ্রিডার ব্রিজ, দুইটি ফুটওভার ব্রিজ, একটি পাবলিক টয়লেট, দুটি পুলিশ বক্স, একটি ৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, একটি ১ হাজার ৭৫৫ মিটার আরসিসি পাইপ ড্রেন, ৩ হাজার ৩৮৩ মিটার যোগাযোগ তার, পৃথক সাইকেল লেন ও ছয়টি বাস বে নির্মাণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম।
২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মনোয়ারুল ইসলাম সরদার কালশী ফ্লাইওভার ও ছয় লেনের সড়ক সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানে কালশী ফ্লাইওভার ও সড়ক প্রকল্পের একটি ভিডিও ডকুমেন্টারিও প্রদর্শিত হয়।
