মান বিবেচনায় দুবাইকে ছুঁয়েছে বাংলাদেশের স্বর্ণালঙ্কার। শুধু ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে এই শিল্পের আড়াইশ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজারে কোনো অবস্থান নেই ‘মেইড ইন বাংলাদেশের’।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাজুস মেলার শেষ দিনে আলোচনায় এমন সম্ভাবনা-প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরেন অর্থনীতিবিদরা।
স্বর্ণের বাজার বিশ্লেষণ অনুসারে, বাংলাদেশে তৈরি স্বর্ণালঙ্কার মানের দিক দিয়ে দুবাইকে ছুঁয়ে ফেলেছে। যদিও ব্র্যান্ডিংয়ে যেতে পারেনি এর ধারে কাছেও। তাই তো জুয়েলারি শিল্পের ২৫০ বিলিয়ন ডলারের বিশ্ববাজারে কোনো অবস্থান নেই মেইড ইন বাংলাদেশের। অথচ এই বাজার বাড়ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হারে।
বাজুস মেলার শেষ দিনের আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদরা বলেন, এগিয়ে যেতে দেশের জুয়েলারি শিল্পের তথ্যের অস্পষ্টতা কাটাতে হবে। সেই সঙ্গে সব শ্রেণির ক্রেতার চাহিদা বিবেচনায় কাজ করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘নিজেরাই হয়তো কোনো কোনো জিনিস তৈরি করছেন কিন্তু বলছেন যে এটি দুবাইয়ের। কেননা, উন্নত মানের দিক দিয়ে এটি দুবাইয়ে পর্যায়ে চলে গেছে। কিন্তু ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা বাংলাদেশকে এখনও সে জায়গায় নিতে পারিনি।’
সম্ভাবনার পথ পাড়ি দিতে জুয়েলারি শিল্পে বন্ড সুবিধা দেয়া উচিত বলে মনে করে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জে কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘আমরা রফতানি বাস্কেট বাড়ানোর চেষ্টা করছি। রফতানি বাস্কেট বাড়াতে হলে তো আমাদের এ ধরনের পণ্য নিয়েই কাজ করতে হবে। যদি তৈরি পোশাক খাতকে এত সব সুযোগ সুবিধা দিয়ে এ পর্যায়ে নিয়ে আসা যায়, তাহলে আমার মনে হয় জুয়েলারি শিল্পের ভ্যালু এডিশন আরও বেশি হবে। রফতানিতে যদি সত্যিই আপনারা (ব্যবসায়ীরা) উদ্যোগ নেন, তাহলে আমাদের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত হবে আপনাদেরকে বন্ড সুবিধা এখনই দিয়ে দেয়া।’
এদিকে বাজুস মেলার স্টল প্যাভিলিয়নে জুয়েলারি শিল্পীদের নিপুণ হাতে গড়া বিভিন্ন নজর কাড়া সব স্বর্ণালংকার মেলে ধরা হয়েছে। বাজার মূল্যের চেয়ে বেশ কম দামে কেনার সুযোগ পেয়ে খুশি ক্রেতা-দর্শনার্থীরা।
এক ক্রেতা বলেন, এখানে অনেক সুন্দর সুন্দর কালেকশন রয়েছে। তাছাড়া এখানে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। যা ক্রেতাদের জন্য অনেক বড় একটি সুবিধা।
এদিকে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) বলছে, মেলার প্রাপ্তি প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘এখানে প্রচুর দর্শনার্থী এসেছেন ও কেনাকাটা করেছেন। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি হয়েছে, সেটি হচ্ছে যে আমরা আমাদের স্বর্ণ শিল্পকে এ মেলার মাধ্যমে দেশে ও বিদেশের কাছে উপস্থাপন করতে পেরেছি।’
বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্রেড অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান উত্তম বণিক বলেন, ‘গত বছর প্রথমবার হিসেবে আমাদের বেচাবিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। আর এবার অপ্রত্যাশিত ব্যবসা হয়েছে। আমি মনে করি, মানুষ আগামী এক বছর অধীর অপেক্ষা করবেন যে কবে আবার এ গোল্ড ফেয়ার হবে। আমরা যে অফার দিচ্ছি আমরা কিন্তু সে দামে কিনতেও পারছি না। আমরা এখন প্রমোশনের জন্য অফার দিচ্ছি। আমরা এ মেলাকে ব্ল্যাক ফ্রাইডে ধরে নিয়েছি।’
বাজুসের তথ্যমতে, ২০২০ সালে দেশের বাজারে ২৮৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের গোল্ডবার ও স্বর্ণালংকার বিক্রি হয়েছিল। যার আকার ২০৩০ সালে দাঁড়াবে ২ হাজার ১০৯ কোটি ৬০ লাখ ডলারে।