কেশবপুরে পলি ভরাটে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী দুঃশ্চিন্তায় হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদীর দু‘পাড়ের মানুষ 

কেশবপুরে পলি ভরাটে হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদী দুঃশ্চিন্তায় হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদীর দু‘পাড়ের মানুষ 

জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর(যশোর)

যশোরের কেশবপুরে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরা অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরশনের ব্যবস্থা না হলে হরি-ঘ্যাঁরাইল নদীর দু‘ পাড়ের মানুষের দূর্ভোগের সীমা থাকবে না আগামী দিনগুলোতে। দূঃশ্চিন্তায় হরি-ঘ্যাঁংরাইল নদীর দু‘ পাড়ের মানুষ।

যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৯টি উপজেলার পানি নিস্কাশনের প্রধান নদী যশোরের ভবদহ থেকে হরি নদী ১৮ কিঃ মিঃ। তেলীগাতি ও ঘ্যাঁংরাইল ২৫ কিঃ মিঃ, হাবরখালি ৯ কিঃ মিঃ, এর উপনদী ও শাখা নদী টেকা মুক্তেশ্বরী, যশোর থেকে ভবদহ পর্যন্ত ৫০কিঃ মিঃ। ঝিকরগাছা থেকে হরিহর, বুড়িভদ্রা ও আপারভদ্রা কাশিমপুর পর্যন্ত ১০১ কিঃ মিঃ । ডুমুরিয়ার হামকুড়া ১৫ কিঃ মিঃ , মধ্যভদ্রা ও জয়খালি নদী ২১ কিঃ মিঃ, পশ্চিম শালতা গোয়াচাপা ২৩ কিঃ মিঃ। বর্তমানে আপার শালতা লোয়ার শালতা ও ভদ্রা নদী ২৯ কিঃ মিঃ। আমতলা ১৬ কিঃ মিঃ। প্রধান নিস্কাশন এর পথে একটি শাখা নদী দেলুটি ৮ কিঃ মিঃ। হাবরখালি ও দেলুটি নদী দিয়ে শিবশা নদীতে পানি পতিত  হয়।

৩১৫ কিঃ মিঃ নদীতে ৯১ টি স্লুইস গেট রয়েছে। কোন কোন রেগুলেটরের সাথে একাধিক বিল যুক্ত আছে। যেমন বর্তমান কেওড়াতলা বিলের সাথে কেওড়া তলা , মধুগ্রাম ও বর্ণি বিল, খুকশিয়া ৮ ভেন্টের সাথে ছোট বড় ২৭ টি বিল যুক্ত যেমন পশ্চিম বিল খুকশিয়া, হরিনা, নড়ই , জিয়েলদা ফটকে ২৮ কিঃ মিঃ দুরত্ব, নরনিয়া ৪ ভেন্টের সাথে ১০/১২টি বিল যুক্ত যার দুরত্ব ১৫ কিঃ মিঃ। ভবদহ ২১ও ৯ ভে›টের সাথে ছোট বড় ৫২টি বিল যুক্ত। যেমন যশোরের হরিনার বিল,কুমার সিং, সুন্দলী , ঝিকরা, বোকড়, ক্যাদারিয়াসহ মোট ৫২ টি বিল রয়েছে। যার ড্রেনেজ খাল মুক্তেশ্বরীসহ প্রায় ২শ’ কিলোমিটার। এছাড়া জিয়েলতলা, পাতিবুনিয়া, আসাননগর , চরবান্দা, তেলিখালি কানাইডাঙ্গা, বকুলতলা, নলতা, শিবনগর মধুখালি, পায়রা, কপালিয়া, সিংঙ্গে, কুলবাড়িয়া, কেশবপুরের বলধালি, গরালিয়া, বুড়লি, পাথরা, টিপনে , চটচটিয়া , রতনখালি , সুন্দর মহল, ফুলবাড়ি, বাগআঁচড়া সহ মোট ৯১টি স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিস্কাশিত হয়। এই অববাহিকায় ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর এলাকা। 

পলি ভরাটে বর্তমানে হরি নদীতে কোন জোয়ার উঠে না এবং কোন গেটের পানি নদীতে পতিত হয় না । তেলিগাতি নদীতে হাটু পানি থাকে। ঘ্যাঁংরাইল নদীতে জোয়ার ছাড়া গোল পাতার নৌকা চলতে পারে না। নদীতে প্রচুর চর পড়েছে। নদীটি ৫০০ মিটারের বেশি চৌড়া থাকলেও ৫০/৬০ মিটারের বেশি জোয়ার উঠে না। নদীর মোহনায় জোয়ার ছাড়া খেয়া পার হওয়া যায় না। মুক্তেশ্বরী নদীর মোহনায় ভবদহের পাম্প মেশিন থাকলেও পলি ভরাটের কারনে পানি সরবাহ করতে পারে না। হরিহর নদীর নিন্ম এলাকায় পলি ভরাটের কারনে গেটগুলো পানি নিস্কাশন করতে পারে না।

বুড়িভদ্রা নদীর নিন্ম এলাকা পলি ভরাটে উপরের পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। ২০১৮ সালে নদী খনন করলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। আপারভদ্রা নদী পূর্ণ পলি ভরাটের কারনে কোন গেট দিয়ে নদীতে পানি পতিত হয় না। হামকুড়া নদী ২০ বছর পূর্ব থেকে পলি ভরাটে অকার্যকর রয়েছে। ফলে বিলের পানি ভিন্ন পথে প্রবাহিত করা হয়েছে। মধ্যভদ্রা ও জয়খালি নদী ২০ বছর পূর্বে মৃত হলেও ২০১৯ সালে খনন করা হলেও পূর্বের অবস্থায় ফিরে এসেছে। পশ্চিম শালতা খনন করা হলেও শাখা নদী হাড়িয়া নদীর উপরের অংশ পলিতে ভরাট হয়ে পড়েছে। শাখা নদী গোনাখালি শীর্ণ (ছোট) আকারে চলছে। গোয়াচাপা নদী পূর্ণ ভরাট থাকায় ঘ্যাঁংরাইল নদীতে পানি আসতে পারে না। আমতলী, তালতলী ও কুলবাড়ি  নদী এ বছর খনন করা হয়েছে। আপার শালতা নদী ৭ কিঃ মিঃ খনন করা হলেও পূর্ণ পানি এখন লোয়ার শালতা নদী দিয়ে ঘ্যাঁংরাইলের পতিত মুখ বারোআড়িয়া মিলিত হয়ে হাবরখালি হয়ে শিবশায়  পতিত হচ্ছে। ৫বছর পূর্বেও এই নদীর পানি লোয়ার শোলমারি দিয়ে কাজিপাশা নদীতে যেত। এখন লোয়ার শোলমারি শতভাগ মৃত হওয়ায় শালতা ভদ্রা হাবর খালি নদীর পূর্ণাঙ্গ উপনদীতে রুপান্তরিত হয়েছে। যশোর জেলার অভয়নগরের দক্ষিন-পশ্চিমাংশ, যশোর সদর থানার দক্ষিণ-পূর্ববাংশ, কেশবপুর ও মনিরামপুর, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া, বটিয়াঘাটার পশ্চিমাংশ, পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়ন এবং সাতক্ষীরা জেলার তালার উত্তর অংশ। হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জমির পরিমান প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর। জনসংখ্যার পরিমান প্রায় ২৫ লক্ষ।

হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরশন কমিটির সভাপতি ও সাবেক পাউবো‘র সদস্য মহির উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের পূর্বে এই অববাহিকায় গোন-বেগনে প্রায় ১৫/২০ কোটি ঘন মিটার পানি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে দাঁড়ায় ২ থেকে আড়াই কোটি ঘন মিটারে। পলির পরিমান ঠিক থাকা পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। এ অঞ্চলে ১৯৮৪ সালের পর থেকে ডজন খানেক নানাবিধ প্রকল্পের বাস্তবায়ন  করলেও টিআরএম প্রকল্প ছাড়া আর কোন প্রকল্প নদীর নাব্যতা সৃষ্টি ও ধরে রাখতে পারেনি। নদীর বুক পলি ভরাটে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থতি বিবেচনায় হরি নদীতে টিআরএম ছাড়া সকল বিকল্প অকার্য্যকর বলে প্রমানিত হয়েছে। হরি নদীতে জরুরী ভিত্তিতে টিআরএম বাস্তবায়নে প্রয়োজন বলে মনে করি।

এ ব্যাপারে কেশবপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, টেকা থেকে হরি নদী খননের জন্য অর্থ বরার্দ্ধের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পাওয়া গেলে হরি, শ্রী হরিনদী খর্ণিয়া ব্রিজ থেকে ১২ কিঃ মিঃ উত্তর দিকে খনন করা হবে। এ মুহুর্তে হরি- ঘ্যাঁংরাইল নদী খননের কোন পরিকল্পনা নেই।

More From Author

মণিরামপুরে সাংবাদিক কন্যা মালিহা জিপিএ-৫ পেয়েছে

মণিরামপুরে সাংবাদিক কন্যা মালিহা জিপিএ-৫ পেয়েছে

উৎপল দে,কেশবপুর: তপস্যা ভট্টাচার্য্য ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় কেশবপুর সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগ হতে অংশ নিয়ে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে এডভোকেট তাপস ভট্টাচার্য্য ও কেশবপুর সরকারি কলেজের প্রভাষক পাপিয়া চক্রবর্তীর মেয়ে। সে মানুষের সান্নিধ্যে কাজ করতে পারে এমন একটা পেশায় নিয়োজিত হতে চায়। তপস্যা সকালের আর্শীবাদ চেয়েছেন,যাতে তার স্বপ্নপূরণ হয়।

কেশবপুরের তপস্যা ভট্টাচার্য্য  গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *