নোয়াখালীতে জিপিএ-৫ পেলেন দৃষ্টিহীন তাসপি

নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি:

মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেলেন কোম্পানিগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজের ছাত্র দৃষ্টিহীন তাসপি।

জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন রিজওয়ান ইসমাম তাসপি। মায়ের মুখে শুনে শুনে পড়াশোনা করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সরকারি মুজিব কলেজ থেকে মানবিক বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি।
রিজওয়ান ইসমাম তাসপি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের রেহান আলী চৌধুরী এলাকার মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও শাহনাজ পারভিন দম্পতির একমাত্র ছেলে।

জানা যায়, আট বছর বয়সে পড়ালেখা শুরু করেন তাসপি। পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে পড়ালেখায় নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল তার। তবে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে মায়ের কাছ থেকে পড়া শুনে শুনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। জিপিএ-৫ পেয়েছেন তাসপি। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষক হতে চান তিনি।

পড়াশোনার ক্ষেত্রে তাসপির একমাত্র সঙ্গী তার মা শাহনাজ পারভিন। তিনি বই পড়ে শোনান, ছেলে তা শুনে মুখস্ত করেন। কখনও কখনও তিনি বই পড়ে রেকর্ড করে রাখতেন যা পরবর্তীতে শুনে মুখস্ত করতেন তাসপি।
তাসপির মা শাহনাজ পারভিন বলেন, আমার ছেলের অন্যদের মতো না। তাই তার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়েছে। সে প্রচণ্ড মেধাবী ফলে কোনো পড়া একবার শুনলে তার মুখস্ত হয়ে যেত। সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি। এসএসসি পরীক্ষায় গণিতে সঠিকভাবে শ্রুতিলেখক না পাওয়ায় জিপিএ-৫ পায়নি। তবুও এসএসসিতে সে জিপিএ ৪ দশমিক ৭২ পেয়েছে। এবার এইচএসসিতে সরকারি মুজিব কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি।
শাহনাজ পারভিন আরও বলেন, আমি উত্তর চরকাঁকড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। আমার একমাত্র ছেলে তাসপি। আরেকটা মেয়ে আছে। আমার হাত ধরে তাসপি স্কুলে যাতায়াত করতো। তার বাবা চট্রগ্রামের সরকারি পোস্ট অফিসে চাকরি করেন। ফলে আমার কাছেই তাসপির বেড়ে ওঠা। তার বন্ধুরা ছিল খুব আন্তরিক। তারাও অনেক সহযোগিতা করেছে। তাসপির স্বপ্ন পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হওয়া। আমার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন।
তাসপির বাবা মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমার সন্তানের ফলাফলে আমি খুব খুশী। যারা তার পড়াশোনার পেছনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সে যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে সেই দোয়া করবেন।
তাসপির সহপাঠী আসিফুল ইসলাম ইফাত বলেন, রিজওয়ান আমাদের কলেজের গর্ব। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও সে পড়াশোনা করে জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমরা সহপাঠীরা সব সময় তার পাশে ছিলাম।
সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষক নুর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে দশজন জিপিএ-৫ পেয়েছে তার মধ্যে তাসপি একজন। তাসপি খুব বুদ্ধিমান ছেলে। আমি ক্লাসে যা পড়াতাম, সেগুলো সে মনোযোগ দিয়ে শুনত, আর রেকর্ড করে নিত। কখনোই সে ক্লাস ফাঁকি দেয়নি।
রিজওয়ান ইসমাম তাসপি বলেন, আমি শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় যুক্ত হতে চাই। আমার মতো কোনো শিক্ষার্থীকে যেন এত কষ্ট না করতে হয় সেজন্য কাজ করতে চাই। আমার পড়াশোনায় সব থেকে বেশি ভূমিকা আমার মায়ের। শিক্ষক-সহপাঠীরাও আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে শ্রুতিলেখকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি যেন শিক্ষক হতে পারি সেই জন্য সবাই দোয়া করবেন।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনষ্টিটিউটে স্পীকার ডেপুটি স্পীকারের সাথে নৈশ ভোজে নেন নাজির মিয়া

তুরস্কে ১০১ ঘণ্টা পর একই পরিবারের ৬ জনকে জীবিত উদ্ধার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *