জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর)
কেশবপুরে ৭২ ঘন্টার অতিবর্ষনে ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। উপজেলার নিম্ন অঞ্চলসহ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, মসজিদ মন্দির, মাছের ঘের প্লাবিত হয়েগেছে। তলিয়ে গেছে গ্রাম্য হাট বাজারসহ ১৭শ হেক্টর জমির আমনধান।
কেশবপুর উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে দেশে নিম্নচাপের প্রভাবে অতিবর্ষনের কারণে কেশবপুর উপজেলা গত ৭২ ঘন্টায় ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অতিবর্ষনে ১ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমির আমনধান প্লাবিত হয়েগেছে। আরো তলিয়ে গেছে ১২০ হেক্টর জমির সবজি, ১০ হেক্টর জমির মরিচ, হলুদ ১০ হেক্টর, গৃষ্মকালীন তরমুজের ৪ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। অতিবর্ষনের ফলে পাঁজিয়া, ত্রিমোহিনী, সাগরদাঁড়ি, মজিতপুর, কেশবপুর সদর ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের রাস্তাঘাট সহ আবাদকৃত আমনধানের ক্ষেত বেশী প্লাবিত হয়েগেছে। বৃষ্টিপাত বন্ধ না হলে আগামীতে উপজেলার ১৪৪ টি গ্রামের মধ্যে ৮২ গ্রাম ক্ষতি গ্রস্থ। বাড়িঘর, গ্রাম্য হাটবাজার ও হাজার হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে যাবে ব’লে মন্তব্য করেছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের অফিস সহকারী মোঃ রুস্তম আলী।
কেশবপুর পৌর সভার অধিকাংশ অঞ্চল প্লাবিত হয়েগেছে। পৌর সভার ১ নং কেশবপুর ওয়াডের সাহাপাড়ার বাসিন্দারা পানিতে ভাসছে, তলিয়ে গেছে পৌর সভার নিম্নাঞ্চল সহ হাবাসপোল, মধ্যকুল, আলতাপোল তেইশ মাইল, সরফাবাজ, বাজিতপুর, বায়সা, সাবদিয়া, শহরের হাবিবগজ্ঞ বাজার, চারআনি বাজার, কাঁচা তরকারির বাজার, মাছের আড়ৎ, পুরাতন মুরগী বাজার, থানা ভবনের দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েগেছে। তাছাড়া কেশবপুর-কাটাখালি সড়ক, গৌরিঘোনা সড়ক, কেশবপুর-পাঁজিয়া, ফতেহপুর সড়ক, হাবাসপোল, ব্যাসডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, পাঁচবাকাবর্শি, কেশবপুর-চুকনগর সড়কের ও কেশবপুর-যশোর সড়কের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েগেছে। পৌর সভার ১ নং ওয়াড কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান বলেন তাঁর ওয়াডের মানুষ এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের বাউশলা, পরচাক্রা, ভান্ডারখোলা, হাড়িয়াঘোপ, মঙ্গলকোট-হিজলডাঙ্গা সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কেশবপুর উপজেলার মৎস্য অফিসার সজিব সাহা মুঠো ফোনে আলাপ কালে বলেন আকাশ বন্যার ফলে শতশত মাছের ঘের প্লাবিত হয়েগেছে এবং হাজার হাজার মাছের ঘের হুমকির মুখে। বৃষ্টিপাত বন্ধ নাহলে উপজেলার হাজার হাজার মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে অবকাঠামোসহ শত কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হবে।
কেশবপুর উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তার অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে উজানের পানির চাপে ও অতিবৃষ্টির কারণে শত-শত কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ধ্বসে পড়ছে। প্লাবিত হয়েগেছে অসংখ্য গ্রম্যহাট বাজার ও রাস্তাঘাট। পাঁজিয়া-ডোঙ্গাঘাটা সড়ক, পাঁজিয়া, হদ , মাগুরখালি সড়ক প্লাবিত হয়েগেছে। এছাড়াও হাসানপুর ইউনিয়নের বগা,মহাদেবপু, রেজাকাটি গ্রাম প্লাবিত হয়েগেছে। শতশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েগেছে। বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের পরচাক্রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়,বাউশলা দাখিল মাদ্রাসা এবং সুফলাকাটী ইউনিয়নের কাটাখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সম্পুর্ন বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক প্রভাষক আলাউদ্দিন আলা বলেন তাঁর ইউনিয়ন পরিষদের ভবনটি পানিতে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া ইউনিয়নের ৯ টি ওয়াডের মধ্যে আলতাপোল ৫ নং ওয়াড বাদে সবকয়টি ওয়াড তলিয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ বাড়ি ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ব্যাসডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রায় নিয়েছে ৩০ টি পরিবার। তবে প্লাবিত এলাকায় পানি বেড়ে যাবে।
সুফলাকাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন তাঁর ইউনিয়নের শত-শত কাঁচা-পাকা বাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ মন্দির প্লাবিত হয়েগেছে এবং তাঁর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি মৎস্য ঘেরের ব্যবসা রয়েছে যা ইতিমধ্যে শত-শত মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে মাছ ভেসে গেছে। কৃষ্ণনগর, সারুটিয়া, পূর্ব সারুটিয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েগেছে। ইতিমধ্যে মানুষ অনেকেই বাড়ি ঘর ছেড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।