জি এম ফারুক আলম, মণিরামপুর
একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরীতে যোগদানের ৪দিন পরেই কোমরে গুলিবিদ্ধ হন সৌমেন মন্ডল। ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলায় ঘটনার দিন সন্ধ্যার একটু আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে সামিল হন তিনি। এখন বাড়িতে বিছানায় যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন তিনি। এখনো তার চোখে-মূখে আতংক। সেদিনের সেই ছবি স্মৃতিতে আসতেই আসকে উঠেন তিনি। তার বাড়িতে গেলে এ চিত্র চোখে পড়ে। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মার মূখে হাসি ফুটানোর একরাশ আশা নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেই ভর্তি হন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র-জনতার এ বিজয় তিনি উদযাপন করতে পারেননি।
সৌমেন মন্ডল যশোরের মণিরামপুর পৌর এলাকার বিজয়রামপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পতি পশুপতি মন্ডল ও রমা রানী মন্ডলের ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন তিনি। সেখানে অনার্স শেষ করেন। এরপর চলতি বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি। এরমধ্যে ফাস্ট আইটি ফার্মে চাকরি নেন।
সেদিনের সেই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সৌমেন মন্ডল বলেন, তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গেলো ১৯ জুলাই শুক্রবার জুম্মা নামাজের পরেই ছাত্রজনতার মিছিলে এলাকায় উত্তাল হয়ে পড়ে। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মোহাম্মদপুরের বসিলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা মিছিল বের করে। তিনি ওই মিছিলে যেতেই পুলিশের আক্রমনের শিকার হন।
তিনি আরও বলেন, ওপর হতে হেলিকপ্টার হতে মিছিলে গুলি করা হচ্ছিল। আর নিচ থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে। তিনি কিছু বুঝে উঠার আগেই উরুরতে কিছু একটা লেগেছে বলে অনুভূতি হয়। কিছুক্ষণ পর দেখতে পান তার পরিহিত প্যান্ট রক্তে লাল হয়ে গেছে। পরে ছাত্র-জনতা তাকে উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে নিয়ে যায়। দেখতে পান উরুতে গুলি লেগে নাভির নিচ দিয়ে বের হয়ে গেছে গুলি। উরুর হাড় ভেঙ্গে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, যেহেতু গুলি বের হয়ে গেছে এবং উরু একটা স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় অস্ত্রোপচার ঝুকিপূর্ণ। তবে, হাড় এমনিতে জোড়া লেগে যাবে তাকে আশ্বস্ত করেছেন চিকিৎসক।
সৌমেনের শিক্ষক দম্পতি বাবা-মামা বলেন, অর্থের দিকে না তাকিয়ে নিজেরা কষ্টে চলে দুই সন্তানের মধ্যে বড় সৌমেনকে ইঞ্জিনিয়ার করার আশায় ঢাকায় ভর্তি করেন। ছেলেকে নিয়ে তাদের চোখে-মূখে এখনো আতংকের ছাপ। ছেলেটা ভাল হয়ে আর দশ জনের মত স্বাভাবিক হাটাচলা করতে পারে-এজন্য দেশবাসীর কাছে আর্শ্বিাদ কামনা করেছেন। গুলিতে অনেকেই নিহত ও আহত হন।
এদিকে ফিকে হতে চলেছে চোখে গুলিবিদ্ধ আহাদ হোসেনের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আহাদ হোসেন গত ৫ আগস্ট মিছিলে সামিল হলে চোখে বুলেট বিদ্ধ হন। এখন বাড়িতে চোখের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। আন্দোলনের সফলতা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। বাড়িতে গেলে তার এই চিত্র চোখে পড়ে।
তিনি একই উপজেলার বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে। অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপেś একটি ঢাকার একটি কোচিং-এ ভর্তি হন তিনি। থাকতেন মালিবাগ এলাকায়।
সেদিনের সেই লোমহর্ষক ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, মিছিল রামপুরা এলাকায় পৌছাতেই পুলিশ তাদের শান্ত থাকতে বলেন। তারা শান্ত হয়ে বসে থাকতেই হঠাৎ রাবার বুলেট তার চোখে এসে লাগে। তিনি আর কিছুই দেখতে পান না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আহাদের উন্ত চিকিৎসার প্রয়োজন। স্বজনরা আহাদ হোসেনের চিকিৎসা ও সুস্থ্যতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। মা রাজিয়া বেগম ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চোখের পানি শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছছিলেন।
আহাদ হোসেনের বড় ভাই মুরাদ হোসেন বলেন, ঢাকায় দুইবার চোখের অপারেশন হলেও গুলি বের হয়নি। দিন অতিবাহিত হলেই চোখের জটিলতা বাড়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা।
এসময় কিছুটা ক্ষোভ করেই আহাদ হোসেন বলেন, তাদের আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও এখনো কেউ তার খোঁজ নেয়নি। অনেকেই ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। তিনি কি এই জন্য জীবন বাজি রেখে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছেন ? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আহাদ হোসেন