মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি :
যশোরের মণিরামপুর থানা পুলিশ ঈদের রাতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই নেতাকে আটক করে থানায় তুলে হাত-পা বেঁধে হকিষ্টিক দিয়ে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। থানায় সদ্য যোগদানকারি ওসি (তদন্ত) পলাশ বিশ্বাস এ নেক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আহতদের স্বজনরা দাবী করেছেন। এদিকে নিরপরাধ ছাত্র ও যুবলীগের দুই নেতাকে মারপিটের ঘটনায় পুলিশের এ কর্মকর্তা পলাশ বিশ্বাসকে অবিলম্বে মণিরামপুর থানা থেকে প্রত্যাহার ও বিভাগীয় শাস্তির দাবীতে শুক্রবার সন্ধ্যায় মণিরামপুর পৌর শহরে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
জানাগেছে, আহত বিল্লালুর রহমান গাজীপুর সরকারি কলেজ থেকে সদ্য মাষ্টার শেষ করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। বিল্লালুর রহমান উপজেলার গোপালপুর গ্রামের নূর আলীর ছেলে। এছাড়া একই রাতে ইকবাল হোসেন নামের আরো এক যুবলীগ নেতাকেও ধরে এনে মারপিট করা হয়। ইকবাল হোসেন মাছনা গ্রামের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম ছেলে।
সূত্র জানায়, তাদের বিরুদ্ধে সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্র্র্র্য্য’র ছবি সম্বলিত লেখার উপর কালি লেপটে দেওয়ায় অভিযোগ তুলে সন্দেহভাজন হিসেবে বাড়ি থেকে থানায় ধরে আনেন সোহান ও সঞ্জয় নামের দুই দারোগা। থানা আনার পর ওই রাতেই ওসি তদন্ত পলাশ বিশ্বাস তাদের হাত-পা বেঁধে হকিষ্টিক দিয়ে বেলালুর রহমানকে বেদুম মারপিট করে হাত ও পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। অপর দিকে যুবলীগ নেতা ইকবালকেও একই অপরাধে মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়।
মারধরের শিকার বিল্লালুর রহমানের মা খাদিজা বেগম থানা চত্ত¡রে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঈদের রাতে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ বড় ছেলেকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসে। সাথে সাথে তারাও থানায় চলে আসেন। কিন্তু কী অপরাধে ছেলেকে ধরে আনা হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। ওই রাত থেকে পরদিন সকাল অবধি তারা থানার গোলঘরে অবস্থান করেন। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ছেলের জন্য খাবার আনতে বাড়িতে যান। ফিরে এসে দেখতে পান হাত-পা ব্যান্ডেজ করা অবস্থায় পুলিশের গাড়ি থেকে ছেলে বেলালুরকে নামানো হচ্ছে। এ সময় পুলিশের কাছে জানতে চাইলে, তাদেরকে জানানো হয় তার ছেলের পেট খারাপ করায় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখতে পান তার ছেলেকে মারধর করে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তিনি এ ঘটনার জন্য ওই কতিথ পুলিশের বিচার দাবী করেছেন।
মারধরের শিকার অপর যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেনের বাবা তরিকুল ইসলাম বলেন, কে বা কারা সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ছবিতে কালি লেপটে দিয়েছে। যার দায়ভার আমার ছেলের উপর চাপিয়ে ঈদের রাতে বাড়ি থেকে থানায় তুলে এনে পুলিশ মারধর করে গুরুতর আহত করেছেন।
থানায় গিয়ে মারধরের শিকার এমডি বিল্লালুর রহমানের সাথে কথা হয় সাংবাদিকদের। এ সময় তিনি জানান, থানার ওসি (তদন্ত) পলাশ বিশ্বাস হকিষ্টিক দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করেছেন। তার মারপিটে আমার হাত ও পা ভেঙ্গে গেছে।
নিরাপরাধ দুই নেতাকে মারপিটের ঘটনার প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রলীগের সাভাপতি মাহামুদুল হাসান রকি ও সাধারণ সম্পাদক রমেশ দেবনাথের নেতৃত্বে মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শুক্রবার সন্ধ্যায় পৌর শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। শ্লোগানে ওসি (তদন্ত) পলাশ বিশ্বাসকে অবিলম্বে মণিরামপুর থানা থেকে প্রত্যাহার করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার দাবী করেন।
এ ব্যাপারে মণিরামপুর থানার ওসি (তদন্ত) পলাশ বিশ্বাস মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট একজন সম্মানিত ব্যক্তির ছবি ও লেখার উপর কালি দেওয়ার অভিযোগে তাদেরকে ধরে আনা হয়েছে।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা: অনুপ কুমার বসু বলেন, প্রাথমিক ধারনা করা হচ্ছে বিল্লালুর রহমানের বাম হাত ভেঙ্গে গিয়েছে। তবে এক্সেরে রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এবিএম মেহেদী মাসুদ বলেন, আটক দুইজনকে শুক্রবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।