মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে ৩ বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
উভয়পক্ষের গোলাগুলির সময় ছোড়া গুলির আঘাতে তুমব্রু হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা রবীন্দ্র ধর, কোনার পাড়ার বাসিন্দা শামসুল আলম ও এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সবাই হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা বলে নিশ্চিত করেছেন ঘুমধুম পুলিশ ফাঁড়ি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মাহাফুজ ইমতিয়াজ ভূঁইয়া। গোলাগুলিতে কোনাপাড়ার কয়েকটি ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে জানা যায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান যুদ্ধে অনেকটাই কোণঠাসা সামরিক জান্তা। তাদের সামরিক জান্তা বাহিনীর বিওপি বা চেকপোস্ট দখল করা নিয়ে মরিয়া বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মি। এ নিয়ে শনিবার দিবাগত রাত থেকে থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
তাদের ছোড়া গুলি, মর্টারশেল ও রকেট লাঞ্চারের বিস্ফোরিত অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম তুমব্রু সীমান্তবর্তী এলাকায় বসতঘরের ওপরে এসে পড়ে।
আজ ভোর থেকেই মুহুর্মুহু গোলাবর্ষণ, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও রকেট লাঞ্চারের বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা। তুমুল লড়াইয়ের এক পর্যায়ে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির লাগাতার আক্রমণে ক্যাম্প ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় সামরিক জান্তা বাহিনীর সদস্যরা।
বিকেল নাগাদ জান্তা বাহিনীর ৫৮ বিজিপি সদস্য ক্যাম্প ছেড়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবদুল্লাহআল মাসরুকি।
এ দিকে ব্যাপক এ গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো এলাকার বাসিন্দারা। ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। অনেকেই প্রাণের ভয়ে নিরাপদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। অনেকেই আতঙ্ক, উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত ঘরে বসেই কাঠিয়েছে। ভয়ে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতেও পারছে না অভিভাবকরা। এছাড়াও কৃষকরা কৃষি ক্ষেতে যেতে ও দৈনন্দিন কাজ করতেও ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনায় সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম-তুমব্রুতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জনিত কারণে ৫টি বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ঘুমধুম-তুমব্রু এলাকার বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সীমান্তে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।