কিছুতেই নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানা যাচ্ছে না। চলমান বাজার অস্থিরতার মধ্যেই আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। যদিও বাজারে এসব সভা-সেমিনারের প্রভাব নেই বললেই চলে। নিত্যপণ্যের বাজারে এক রকমের তামাশা চলছে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোক্তারা।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। সে হিসাবে হাতে আছে এক মাসের অল্প কিছুদিন বেশি। রমজান আসন্ন হলেও বাজারের অস্থিরতা এখনও বিরাজমান।
রমজানের আগে চিনি, খেজুর, আলু, পেঁয়াজ, চাল ও ভোজ্যতেল আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, এটি ব্যবসায়ীদের এক ধরনের চালাকি।
প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন সাইমুন হাসান। সাধারণ ভোক্তা হিসেবে বর্তমান বাজার সম্পর্কে ক্ষোভ ঝাড়লেন। তিনি বলেন, আগের বছর শবেবরাতের আগে দাম বাড়িয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন রমজানে নতুন করে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। এ বছর আরও আগে এই চালাকি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। এক মাস আগে থেকেই প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন তারা।
আরেক ভোক্তা নবনীতা হাসান বলেন, প্রতি রমজানের আগে সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর অনেক তোড়জোড় দেখা যায়। কিন্তু দিন শেষে বাজারে পণ্যের দাম ঠিকই বাড়ে। এবারও এর ব্যত্যয় হবে বলে মনে হচ্ছে না।
ভোক্তারা বলছেন বাজার নিয়ে তাদের সঙ্গে এক রকমের তামাশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশব অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান সময় সংবাদকে বলেন, এবার রোজার আগেই প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীরা। এটা এবারই যে প্রথম হচ্ছে এমন না। বিগত তিন-চার বছর ধরে ব্যবসায়ীরা রোজার একমাস আগে থেকে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। পরে রোজার প্রথম ১৫ দিন দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় থাকে বাজারে। এ সময় যা মুনাফা তোলার ব্যবসায়ীরা তা তুলে নিচ্ছেন।
ক্যাব সভাপতি বলেন, দাম বাড়বে এমন আতঙ্কে রোজার আগে থেকে ভোক্তারা বেশি করে পণ্য কিনতে থাকেন। এতে করে ব্যবসায়ীরা আগে ভাগেই দাম বাড়ান। এক্ষেত্রে ভোক্তাদেরও সচেতন হওয়া উচিত। পণ্য ক্রয়ে তাড়াহুড়া করলে দাম কমে না বরং আরও বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে এ বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
ব্যবসায়ীদের কারসাজি থামাতে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, জরিমানা কোনো সমাধান না। যা জরিমানা করা হয় তার থেকে অনেক বেশি মুনাফা করে নেন ব্যবসায়ীরা। আবার জরিমানা করলে ব্যবসায়ীরা আদালতের দ্বারস্থ হন। তখন আইনি জটিলতায় এসব পদক্ষেপ ঝুলতে থাকে। জরিমানা করা বাদ দিয়ে যারা সিন্ডিকেট ও বাজার কারসাজি করছেন তাদের জেলে পাঠাতে হবে। নাহলে বাজারে এ অরাজকতা থামানো যাবে না।
ব্যবসায়ীদের একটি অংশ দাম বাড়ানো প্রসঙ্গে বলছেন, আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। এতে করে একদিকে ক্রেতারা পণ্য কম কিনছেন, অন্যদিকে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করার কারণে মানুষের রোষানলেও পড়ছেন তারা।এদিকে সময় সংবাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধির পাঠানো এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক বৃদ্ধির অজুহাত দাঁড় করিয়ে বাজারে খেজুরের সংকট সৃষ্টি করতে আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সাড়ে তিন মাসে বাংলাদেশে মাত্র ১০ হাজার ৮০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। যা গত বছর এ সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
শুল্ক বেশি থাকার অভিযোগ করে চট্টগ্রামের ফলমন্ডির মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, কাস্টম যদি ট্যাক্স কমিয়ে দেয়, তাহলে আমদানিকারকরা খেজুর আমদানি করতে পারবেন এবং সাধারণ মানুষও খেজুর কিনে খেতে পারবেন।
গত বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫ কেজির প্রতি প্যাকেট খেজুরের শুল্কায়ন হার ছিল মাত্র ৫০ সেন্ট থেকে ১ মার্কিন ডলার। কিন্তু একেবারে নামমাত্র শুল্ক দিয়ে আমদানি করা খেজুর বিভিন্ন নামে বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। গত বছর শুধু রমজান মাসেই খেজুরের দামের কারসাজিতে অন্তত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ এপ্রিল থেকে খেজুরের শুল্কায়ন সাধারণ কোয়ালিটি ৫০ সেন্ট থাকলেও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির শুল্ক নির্ধারণ করা হয় ৪ মার্কিন ডলার।
তবে এবারও ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুর ও চালের শুল্কহার কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।