জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর)
হেমন্তের শুরুতেই কুঁয়াশার চাদরে মোড়ানো সকালের সোনালী সূর্যের মৃদু হাসি বাংলার মানুষকে জানান দেয় শীতের আগমনি বার্তা। এই সময় যশোরের কেশবপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল জুঁড়ে শুরু হয় গাছিদের খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন ঠিলে-খুংগি-দড়া- গাছি দঁা বালিধরাসহ ইত্যাদি তৈরীর অবিরাম প্রস্তুতি। বেড়ে যায় গাছিদের ব্যস্ততা। শীত এলেই আবহমান বাংলার প্রতিটি ঘরেঘরে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদেরও ব্যাবস্ততা বেড়ে যায় দিগুন। মৌসুমের শুরুতে আলতো শীতের সোনালী সূর্য্যের রোদেলা সকালে গাছিরা বাঁশের ডগা দিয়ে নলি তৈরীতে ব্যাস্ত সময় পার করে। কেউবা আবার পাটের আশ দিয়ে দড়া তৈরীতে মগ্ন। বেলা বাড়তেই ঠিলে-খুংগি-দড়া- গাছি দঁা বালিধরা নিয়ে গাছিরা ছুটে চলে গাছ কাটতে। গাছিরা বিকালে গাছ কেটে আবার ভোরে উঠে রস নামাতে কূয়াশা ভেদ করে চড়ে বেড়ায় এক গাছ থেকে আরেক গাছে। এর পর ব্যাবস্ততা বাড়ে মেয়েদের। সকাল থেকে দুপুর অবধি রস জ্বালাতে গিয়ে কোন ফুসরত নেই তাদের দম ফেলার। এই সকাল সন্ধ্যা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল এই খেজুরের গুড়।
কেশবপুরের খেজুরের রসের খ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কেশবপুর, মনিরামপুর থেকে তাজা খেজুরের রসের তৈরী গুড় বাংলাদেশের প্রত্যেক অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পাশা-পাশি আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতেও রপ্তানি হয়, বিদেশে খেজুরের গুড়ের ব্যাবপক কদর রয়েছে। যশোর তথা কেশবপুরকে সারা পৃথিবীতে পরিচিত করেছে যে কয়টি বিষয় তার মধ্যে যশোরের কেশবপুরের খেজুরের রস অন্যতম একটি। শীত আসলেই আবহমান বাংলার ঘরেঘরে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। প্রতি ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা তৈরীর জন্য ঢেঁকিতে চাউলের গুড়া তৈরীর মহোৎসব। বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে সন্ধ্যা হলেই একদিকে শুরু হয় কবি গান অন্য দিকে সন্ধে রস দিয়ে হয় পায়েশ,পুলিসহ বিভিন্ন প্রকার পিঠা তৈরীর ধুম। এ যেন কবির সেই ঐতিহাসিক উক্তির বাস্তব রূপায়ণ; ঠিলে ধুয়ে দে বউ-গাছ কাটতে যাব সন্ধে রস ঝেড়ে এনে জাউ রেন্ধে খাবো