৭৪ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেই কোন আয়োজন, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি


রাজধানীর পুরান ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। লাল ইটের বাতিঘর খ্যাত এই বিদ্যাপীঠটি ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

শিক্ষক সংকটসহ ভৌত অবকাঠামোগত বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে কলেজটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ৭৪ বছর পূর্ণ করেছে। এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেই কোন রকমের আয়োজন উৎসব এমনকি নেই আলোকসজ্জাও যার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।

কলেজটির ৭৪ বছর পূর্তি এবং ৭৫ বছরে পদার্পণ উপলক্ষেও কোনো আয়োজন হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মোহসিন কবীর।

তিনি বলেন, ‘কলেজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনুষ্ঠান করতে হবে এমন কোনো রেওয়াজ নেই। ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছর পূর্তিতে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে অনুষ্ঠান হয়। প্রতিবছর
কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে হবে এমন আমি কোথাও দেখিনি।

এ কলেজের প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের সময়ে অধ্যক্ষ স্যার যাকযমক করে ভবন গুলো আলোকসজ্জায় আলোকিত করত। কলেজ হলরুমে উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত করা হতো কিন্তু বর্তমান সময়ের অধ্যক্ষ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেন না।
বিগত সময়ে দেখা গেছে জাতীয় অনুষ্ঠান গুলোতেও
তুলনামুলক ভাবে উদযাপন করা হয়না।

অনার্স অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা জানান, এত পুরোনো একটা প্রতিষ্ঠান অথচ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হবে না, বিষয়টি মানা যায় না। ছোটখাটো করে হলেও একটা অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন ছিল এ বলে অধ্যক্ষের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

আরেক শিক্ষার্থী জবা চৌধুরী বলেন, ‘সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও আমাদের উচিত কলেজে অনুষ্ঠান করা। অত বড় পরিসরে না পারলেও ছোট করে করা। কারণ ছোট প্রোগ্রামগুলো সবাই একত্রে হলে সবার মধ্যে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। কলেজের সবাই তো একটা পরিবারের মতোই।’

৭৪ বছরের ইতিহাস: ১৯৪৯ সালের ১১ নভেম্বর নালগলার জুম্মন ব্যাপারী লেনের ভাওয়াল রাজ এস্টেটে কলেজটির কার্যক্রম শুরু হয়। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর উপাধি অনুসারে শুরুর দিকে এই কলেজটির নাম রাখা হয়েছিল ‘কায়েদ-ই-আজম কলেজ’। পরবর্তী সময় লক্ষ্মীবাজারে জমি ক্রয় করে কলেজটিকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। আর নালগলার ভবনটিকে ছাত্রাবাসে রূপান্তর করা হয়।

১৯৫০ সালে সৈয়দ জহির আহসান কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে কলেজটির নাম রাখা হয় ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’।

১৯৮৪ সালের পহেলা নভেম্বর কলেজটি সরকারি কলেজে পরিণত হলে এর নাম হয় ‘সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ’। ২০০৪-২০০৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু করা হয়। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য ও শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের জন্য ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার যে সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *