আগামী ৫ অক্টোবর থেকে ভারতের মাটিতে বসছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বাইশ গজে বিশ্বসেরা হওয়ার এই লড়াইয়ে ইতোমধ্যেই জায়গা নিশ্চিত করেছে ১০ দল। ভারত বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে ধারবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে ঢাকা পোস্ট। আজ তৃতীয় পর্বে থাকছে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ স্কোয়াড নিয়ে কাটা-ছেঁড়া।
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আয়োজক ছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেখানে ম্যাচ খেলতে আপত্তি ছিল ভারতের। ফলে হাইব্রিড মডেলে হয়েছে এশিয়া সেরার গত আসর। পাকিস্তান মূল আয়োজক হলেও ভারত সেখানে যায়নি। তারা ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কায়। রোহিত শর্মার দল পাকিস্তানের মাটিতে পা না দিলেও ভারতের মাটিতেই বিশ্বকাপ খেলবেন বাবর আজম-শাহিন আফ্রিদিরা। এ নিয়েও নাটক কম হয়নি! লম্বা সময় ধরেই দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড এবং সরকারের পক্ষ থেকে নানা মন্তব্য করা হয়েছে। এমনকি বাবররা ভারতের ভিসাও পেয়েছেন বিমানে উঠার আগের দিন!
ভিসা জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘ ৭ বছর পর ভারতের মাটিতে পা রাখে পাকিস্তান দল। আবহাওয়া, কন্ডিশন কিংবা উইকেট সবদিক থেকেই দুই দেশ কাছাকাছি। তাই অনেক দিন পর ভারতে গেলেও সেখানকার উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা না বাবরের দলকে। কন্ডিশনের সঙ্গে মিল থাকায় অনেকের ধারণা, চিরপ্রতিপক্ষের ঘর থেকেই বিশ্বকাপ ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরতে পারে পাকিস্তান! এই লাইনটাকে কিছুটা অতিরঞ্জিত বলতে পারেন! তবে এই বিশ্বকাপে ফেভারিট দলগুলোর একটা যে পাকিস্তান, এখানে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই।
বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ব্যাটারদের প্রধান্য দিয়েছে পাকিস্তান। ওপেনার হিসেবে আছেন তিনজন ব্যাটার-আব্দুল্লাহ শফিক, ফখর জামান ও ইমাম উল হক। তাদের মধ্যে ইমামের জায়গা পাকা। এই ওপেনার সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপেও রানের মধ্যেই ছিলেন তিনি। তার সঙ্গী হিসেবে প্রথম পছন্দ ফখর। এই ওপেনারের অভিজ্ঞতায় ভরসা রাখতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট। এই দুইজনের কেউ চোটে পড়লেন বা কন্ডিশন কিংবা প্রতিপক্ষ বিবেচনায় প্রথম পছন্দের দুইজনের কেউ বাদ পড়লে সুযোগ আসতে পারে তরুণ শফিকের।
তিন নম্বরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় খেলবেন বাবর আজম। দলটার ব্যাটিংয়ের পাওয়ার হাউজ এই ব্যাটার। অধিনায়কত্বের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবেন বাবর। তাকে ঘিরেই ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা সাজাবে টিম ম্যানেজমেন্ট। এমনকি প্রতিপক্ষ দলের ডিফেন্ডিং পরিকল্পনায়ও থাকবেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। নেতা হিসেবে আইসিসি ইভেন্টের শিরোপা জেতার বড় সুযোগও থাকছে তার সামনে। ভারত মিশন সফল করতে হলে ব্যাটিংয়েও বাবরকেই সেনাপতির ভূমিকায় থাকতে হবে।
চার নম্বরে খেলবেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। উইকেট সামলানোর দায়িত্বও থাকবে তার কাঁধে। তবে ব্যাট হাতেও দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য এই উইকেটকিপার ব্যাটার। তিনি স্পিনের বিপক্ষে বরাবরই সাবলীল। তাই মিডল ওভারে দলের রানের চাকা সচল রাখতে তার ব্যাটের দিকেই থাকিয়ে থাকবে টিম ম্যানেজমেন্ট। রিজওয়ানের বিকল্প কোনো উইকেটকিপার মূল স্কোয়াডে রাখেনি পাকিস্তান। তিনি চোটে পরলে ডাক পড়বে ট্রাভেলিং রিজার্ভে থাকা মোহাম্মদ হারিসের।
রিজওয়ান ছাড়াও মিডল অর্ডারের বড় ভরসার নাম ইফতিখার আহমেদ। সাম্প্রতিক সময়ে কথা বলছে তার ব্যাট। এ বছর একাধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও তিনি সেরা রান স্কোরারদের তালিকায় উপরের দিকে ছিলেন। বিশ্বকাপেও তার ওপর বড় দায়িত্ব থাকবে। বিশেষ করে টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে যেন দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দিতে পারেন। তাছাড়া তার পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যও দলের জন্য বাড়তি পাওয়া হবে।
মিডল অর্ডারে আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার শাদাব খান। এই অলরাউন্ডারও ব্যাট হাতে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন সউদ শাকিল। তিনি উইকেটে এসে দ্রুত রান তুলতে পারেন। যা দলের স্কোরে প্রভাব ফেলবে। একাদশে সুযোগ মিললে সালমান আলী আগা, উসামা মীররাও ব্যাট হাতে কার্যকরী হতে পারেন।
পাকিস্তানের স্পিন বিভাগের নেতৃত্বে থাকবেন শাদাব খান। এই লেগ স্পিনারের সঙ্গী হবেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। তাছাড়া দলের প্রয়োজনে হাত ঘুরাতে পারেন ইফতিখারও। আর স্পিনে ব্যাকআপ হিসেবে আছেন উসামা মীর। একাদশের কারও চোট কিংবা কন্ডিশন অনুযায়ী সুযোগ আসতে পারে এই তরুণ স্পিনারেরও।
পাকিস্তানের সবচেয়ে ভরসার জায়গা পেস বিভাগ। যেখানে নেতা হিসেবে থাকবেন শাহিন আফ্রিদি। নতুন বলে তার সুইং যেকোনো ব্যাটারের জন্যই হুমকি স্বরূপ। তার সঙ্গে আছেন হারিস রউফ, হাসান আলীর মতো পেসার। মূলত এই তিনজনকে নিয়মিতই পাকিস্তানের একাদশে দেখা যাবে। তবে উইকেট আর কন্ডিশন বিবেচনায় যদি বাড়তি আরেকজন পেসার খেলায় টিম ম্যানেজমেন্ট তাহলে চতুর্থ পেসার হবেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র।
বিশ্বকাপে দলে পাকিস্তানের শক্তির জায়গা পেস বিভাগ, এতে কারও সন্দেহ থাকার কথা না। তবে পাকিস্তানের আক্ষেপের জায়গায়ও এই পেস বিভাগ! কারণ নাসিম শাহর মতো পেসারকে পাচ্ছে না তারা। এশিয়া কাপে খেলার সময় চোটে পড়েছিলেন। এরপর বিশ্বকাপ থেকেও ছিটকে গেছেন তিনি।
১৫ জনের স্কোয়াডের বাইরে আরও ৩ জন ক্রিকেটারকে ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে রেখেছে পাকিস্তান। রিজওয়ানের বিকল্প উইকেটকিপার হিসেবে আছেন মোহাম্মদ হারিস। তিনি ওপেনিং কিংবা লোয়ার মিডল অর্ডার দুই জায়গায়ই ব্যাটিং করতে পারেন। সে হিসেবে ওপেনারদেরও বিকল্প হতে পারেন তিনি। স্পিনে বিকল্প হিসেবে আছেন আবরার আহমেদ। মূল স্কোয়াডের কোনো স্পিনার চোটে পড়লে সুযোগ আসতে পারে এই তরুণের। পেস বিভাগেও একজন বিকল্প রেখেছে পাকিস্তান। তরুণ পেসার জামান খান ট্রাভেলিং রিজার্ভ হিসেবে দলের সঙ্গে আছেন।
পাকিস্তান স্কোয়াড- বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, ইফতিখার আহমেদ, শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাওয়াজ, শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, সালমান আলী আগা, ওসামা মীর, সৌদ শাকিল, হাসান আলী।
রিজার্ভ ক্রিকেটার- মোহাম্মদ হারিস, আবরার আহমাদ, জামান খান।