জয়দেব চক্রবর্ত্তী, কেশবপুর (যশোর)
যশোরের কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ভদ্রা নদীর পুর্বাঞ্চল তীরে ভরত ভায়না গ্রাম নামক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ১৮০০ বছরের ঐতিহ্য ’ভরতের দেউল’ ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত। কেশবপুর শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। স্থাপনাটি এক নজর দেখার জন্য পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় ,মোট ৮২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ ধাপে ধাপে ওপরের দিকে উঠে গেছে। ঢিবির শীর্ষ ধাপটির দেয়াল ৯ ফুট প্রশস্ত। এর মধ্যে ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের বর্গাকৃতির চারটি প্রকোষ্ঠ আছে। মূল অট্টালিকার প্রধান কক্ষটি এই প্রকোষ্ঠের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপের দেয়াল ৩ ফুট চওড়া, এখানে বিভিন্ন আকৃতির ১৯টি প্রকোষ্ঠ আছে। ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি চওড়া দেয়ালের তৃতীয় ধাপে প্রকোষ্ঠ ১৮টি। সাড়ে ৩ ফুট চওড়া দেয়ালের চতুর্থ ধাপটিতে ১৯টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ আছে। শেষ ধাপে ১০ থেকে ১৩ ফুট চওড়া দেয়ালের মধ্যে ২২টি বদ্ধ প্রকোষ্ঠ আছে। তার নিচে প্রায় ১০ ফুট চওড়া প্রদক্ষিণ পথ আছে। মূল মন্দিরের চারদিকে চারটি প্রবেশপথ আছে। এগুলোর মধ্যেও এখন পর্যন্ত সাতটি প্রকোষ্ঠ দেখা গেছে। গঠনশৈলী বিবেচনায় পূর্ব দিকটাই এর মূল প্রবেশপথ ছিল বলে ধারণা করা হয়।এর নির্মাণে যে ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তার পরিমাপ ৩৬ সেন্টিমিটার, ২৬ সেন্টিমিটার ও ৬ সেন্টিমিটার। এত বড় ইট এই অঞ্চলের কোনো পুরাকীর্তিতে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়নি।স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও গুপ্তযুগের একটি পোড়ামাটির মাথা, পোড়ামাটির মানুষের হাত ও পায়ের কয়েকটি ভগ্ন টুকরা, কয়েকটি মাটির প্রদীপ, অলংকৃত ইটের টুকরা, পদচিহ্ন-সংবলিত দুটি ইটের টুকরা এবং একটি মাটির ক্ষুদ্র পাত্র সংগৃহীত হয়েছে, যা খুলনা বিভাগীয় জাদুঘরে রক্ষিত আছে।
আনুমানিক দেড় হাজার বছরেরও বেশি আগের এক পুরাকীর্তি। ভরত ভায়না বৌদ্ধ মন্দির বর্তমানে সেটির দেখভাল করছে সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ভদ্রা নদীর সেতু পার হয়ে কিছুদূর গেলেই ভরত ভায়না গ্রাম। অসংখ্য গাছগাছালি, বাঁশবাগান আর পাখির কলরবে মেঠো রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলেই দেউলের চূড়া নজরে পড়ে। দেউল প্রাঙ্গণে আছে বিশাল এক বটগাছ। কেশবপুর সদর থেকে এর দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার পুর্বাঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর মধ্যে এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনটি স্থানীয় জনগণের কাছে দীর্ঘদিন ভরতের দেউল বা ভরত রাজার দেউল নামে পরিচিত। সপ্তাহে শুক্রবার হতে শনিবার পর্যন্ত দর্শনাথর্ীরা টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে। চারিদিকে প্রাচীর দেওয়া। ঘুরতে আসা দর্শনাথর্ী হাফিজুর রহমান বলেন, ভরত রাজার দেউল দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
ভরত ভায়না বৌদ্ধ মন্দিরটি দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র আদি ঐতিহাসিক যুগের স্থাপনা হিসেবে এরই মধ্যে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। পর্যটকদের কাছে জায়গাটি দর্শনীয় স্থানে রূপ নিয়েছে।
এ ব্যাপারে কেশবপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক উৎপল দে বলেন, ভরত রাজার দেউল একটি পুরাকর্ীতি। বর্তমানে এটি সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর অধীনে রয়েছে।