অ্যালোপ্যাথির পাশাপাশি সাধারণ মানুষের একটা অংশ নির্ভর করেন হোমিওপ্যাথির উপরেও। অনেকের আবার বিশ্বাস কিছু রোগের চিকিত্সা হোমিওপ্যাথিতেই ভালো হয়। কিন্তু জনপ্রিয় এই চিকিত্সা পদ্ধতি নিয়ে বিতর্কও রেয়ছে। কেউ কেউ বলে থাকেন ওইসব মিষ্টি বড়ি সান্তব্না ছাড়া আর কিছুই নয়। কেউ আবার বলে থাকেন হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা আসলে বিপজ্জনক। হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে ১০টি চালু ধারণা সম্পর্কে কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক।
জার্মান চিকিত্সক হ্যানিম্যানের হাত থেকে চালু হয় এই হোমিওপ্যাথি চিকিত্সা পদ্ধতি। তার পর থেকে ২০০ বছর তা টিকে রয়েছে। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধের কার্যকারিতা এমনকি এই চিকিত্সা পদ্ধতি নিয়ে একাধিক চালু প্রশ্ন রয়েছে। এনিয়ে কথা বলেছেন দিল্লির বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক ডা কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে গেলে বহু বাধা নিষেধ রয়েছে।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে ১-২টি বাধা নিষেধ রয়েছে। অন্যান্য যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তার রোগীর রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। ওইসব বিধিনিষের শুধু হেমিওপ্যাথির ক্ষেত্রেই মেনে চালা হয় না। অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োজ্য।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি ওষুধ যেভাবে তৈরি হয় তা সন্দেহজনক।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: ভারত সরকার-সহ দুনিয়ার অধিকাংশ দেশে হোমিওপ্য়াথি ওষুধের উপকরণ, ওষুধ তৈরি, প্যাকেজিং ও লেবেলিংয়ের ক্ষেত্রে স্টান্ডার্ড পদ্ধতি মেনে চলা হয়। কোনও প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কেম্পানির হোমিওপ্যাথি ওষুধ নিশ্চিন্তে খেতে পারেন রোগীরা।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথি চিক্তিসকেরা মানবদেহের গঠন ও কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু জানেন না।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: ভারতে হোমিওপ্যাথি পড়তে গেল সাড়ে পাঁচ বছর লাগে। আরও তিন বছর লাগে এমডি ডিগ্রি পেতে গেলে। এমবিবিএস ও এমডি করতে গেলে এই সময়ই লাগে। স্নাতক স্তরে হোমিওপ্যাথির সিলেবাস অ্যালোপ্যাথির মতোই। এমবিবিএস-এ যে বই পড়ানো হয় হোমিওপ্যাথিতেও সেই একই বই পড়ানো হয়।
প্রশ্ন: ছোটখাটো রোগে হোমিওপ্য়াথি চলতে পারে।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: বহু জটিল ও সিরিয়াস রোগের চিকিত্সাও হোমিওপ্যাথিতে করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা, অর্গান ফেল করেছে এমন রোগী, অটো ইমিউনের ক্ষেত্রেও হোমিওপ্যাথিতে চিকিত্সা হচ্ছে। বহুক্ষেত্রে একেবারে শেষ সময়ে হোমিওপ্য়াথিতে চিকিত্সা করা হয়। ওইসব ক্ষেত্রেও রোগী ভালো হয়ে যাওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে।
প্রশ্ন: হোমিওপ্য়াথির ক্ষেত্রে প্রমাণের জায়গা নেই।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: হোমিওপ্যাথিতে ওষুধের কার্যকারিতা প্রামাণের বহু জায়গা রয়েছে। নতুন নতুন রিসার্ট হচ্ছে। ওষুধের কার্যাকারিতা এখন পদার্থ ও রসায়ন বিদ্যার সাহায্যে প্রমাণ হচ্ছে।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যাথির চিকিত্সকরদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: স্নাতক স্তরে সাড়ে পাঁচ বছর পড়তে হয়। ফার্মাকোলজি ছাড়া এমবিবিএস-এর গোটা পাঠক্রমটাই হোমিওপ্য়াথিতে রয়েছে। অনেকসময় এমবিবিএস পড়ুয়াদের সঙ্গেই ক্লাস করেন হোমিওপ্যাথির পড়ুয়ারা। দেশে যেখানে চিকিত্সকের অভাব সেখানে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সকেরা বড় ভূমিকা নিচ্ছেন।
প্রশ্ন: হোমিওপ্যথি ওষুধ আসলে স্টেরয়েড
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রচলিত বহু ওষুধে স্টেরয়েড থাকে। হোমিওপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে এরকম কথা চালুর কারণ হল বহু ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য কাজ করেছে হোমিওপ্য়াথি ওষুধ। তবে কিছু হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক স্টেরয়েড ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। স্টেরয়েড হোমিওপ্যাথি ওষুধের অংশ নয়।
প্রশ্ন: খুব ধীরে কাজ করে হোমিওপ্যাথি ওষুধ।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: খুব কম সময়ে হোমিওপ্যাথি ওষুধ কাজ করে। প্রবল যন্ত্রণা, জ্বর, ডায়রিয়ার মতো ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ভালো কাজ করে। ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে টানা চিকিত্সার পর কাজ শুরু করে হেমিওপ্য়াথি ওষুধ। কিন্তু হোমিওপ্যাথি ওষুধ ধীরে কাজ করে এমন কথা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে হোমিওপ্য়াথি ওষুধ খাওয়া যায় না।
ডা বন্দ্যোপাধ্যায়: যেসব ক্ষেত্রে রোগী এখনই তাঁর চালু ওষুধ ছেড়ে দিতে পারবেন না সেক্ষেত্রে হোমিওপ্য়াথি পাশাপাশি চলতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস রোগী তার ওই ওষুদের সঙ্গেই হোমিওপ্য়াথি ওষুধ খেতে পারেন। ধীরে ধীরে তা কমিয়ে হেমিওপ্য়াথির উপরে সম্পূর্ণ নির্ভর করা হয়। তাও আবার রোগীর আগের চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলে।
প্রশ্ন: হোমিওপ্য়াথি রোগ আরও জটিল করে দিতে পারে।
ডা বন্দ্যোপাধ্য়ায়: রোগের যেসব উপসর্গ প্রচলিত ওষুধ চেপে দিয়েছিল সেই ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতেই রোগীর পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হতে পারে। এরকম পরিস্থিতি থেকেই হয়তো বলা হয় হোমিওপ্যাথি রোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিতসা ও ওষুধ নিরাপদ। বহু রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রাখে হোমিওপ্যাথি। পৃথিবীর বহু দেশে কোটি কোটি মানুষের যন্ত্রণা ও রোগ নিরাময় করছে।