মিসরীয় সাতাতা জ্ঞান-বিজ্ঞানে কত দূর উন্নতি করেছিল, তার বড় নিদর্শন পিরামিড। আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে কীভাবে এগুলো তৈরি হলো, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। এলিয়েন কিংবা দেবতাদের মিথলজি ভেঙে আজকের বিজ্ঞান অনেকখানিই উদ্ধার করতে পেরেছে পিরামিড-রহস্য…
একটা সময় পিরামিড-রহস্য ভেদ করা অসম্ভব মনে করা হতো। এই সুযোগে গুজব ব্যবসায়ীরা একে ভিনগ্রহীদের তৈরি স্থাপত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু দিন বদলেছে, প্রযুক্তি আর গবেষণার সুবর্ণ সময়ে মানুষ ভাঙতে পেরেছে পিরামিড-রহস্যের আগল। এখন আর একে ভিনগ্রহী প্রাণী বা দানবাকৃতির মানুষের তৈরি স্থাপনা বলে চালানোর উপায় নেই। পিরামিড তৈরির জন্য প্রাচীন মিসরীয়দের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতার জয়গান করছে আধুনিক বিজ্ঞান। অনেকখানিই উদ্ঘাটিত হয়েছে, কীভাবে তৈরি হয়েছিল এসব অক্ষয় কীর্তি।
সত্যিকারের পিরামিড তৈরির কাজটা শুরু হয় মিসরের তৃতীয় রাজবংশের রাজত্বকালের শুরুতেই। এই রাজবংশের প্রথম ফারাও ছিলেন জোসার। আগের সব ফারাওয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও চেয়েছিলেন বেঁচে থাকতেই নিজের সমাধি তৈরি করতে। মাস্তাবার চেয়ে বেশি কিছু হোক, সে ভাবনা কার মাথায় প্রথম এসেছিল? জোসারের, নাকি ইমহোটেপের? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিতর্ক নেই প্রথম পিরামিড তৈরির ইতিহাস নিয়ে। সবচেয়ে জনপ্রিয় মতটার কথাই আমরা বলি। জোসার চেয়েছিলেন, ব্যতিক্রম কিছু করতে। তাঁর সমাধিটা কেমন হবে, তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইমহোটেপকে। বলেছিলেন, এমন সমাধি যেন তাঁর হয়, যেটা বাকি সবার চেয়ে আলাদা হবে। যেন যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখে তাঁকে।
ফারাও ফরমাশ দিয়েই খালাস। কাজ তো করতে হবে ইমহোটেপকেই। ফারাও অবশ্য জানেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাথা ইমহোটেপ, তিনি ভেবে নিশ্চয়ই এমন কিছু বের করবেন, যেটা আসলে ইতিহাস তৈরি করবে। তা ইমহোটেপ করেছিলেনও।
আর করেছিলেন বলেই পৃথিবী আজ জানতে পারছে, পাঁচ হাজার বছর আগেও মানুষের স্থাপত্যবিদ্যা কতটা প্রখর ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের যেমন আবুল ফজল, মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের যেমন চাণক্য, জোসারের তেমনি ইমহোটেপ—একাধারে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, স্থপতি, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক। এমন একজন লোক আশপাশে থাকলে রাজার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। মিসরের বিস্ময় পিরামিড সৃষ্টিতে ইমহোটেপের বুদ্ধি আর জ্ঞানই ইতিহাস তৈরি করেছিল।