যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সামরিকবিষয়ক বিভাগের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরা রেসনিক বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তিনি সামগ্রিক নিরাপত্তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এসব বিষয়ে জানতে চান মিরা রেসনিক। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নবম নিরাপত্তা সংলাপের পর পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের ঢাকা সফরের বিষয়েও কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের আগে মিরা রেসনিক ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নবম বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা সংলাপে যোগ দেন। সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগ) খন্দকার মাসুদুল আলম।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছে, আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা বলেছি যে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী নিজেও অনেকবার বলেছেন এবং বিদেশিদের কাছেও বলেছেন।’
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বাকি কাজগুলো করছে। সেখানে সক্ষমতা বাড়াতে যদি সাহায্য লাগে, সেটি যুক্তরাষ্ট্র করতে রাজি আছে বা করতে চেয়েছে। আমরা দেখছি, যে ধরনের প্রস্তুতি হওয়া দরকার সেগুলোই হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো কে কী ভাবছে, সেটিতো আমরা বলতে পারব না ।’ মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘সামগ্রিক নিরাপত্তার কথা যদি বলি সেখানে তো মানবাধিকার এসেই যায়। সেখানে আমাদের যেসব বাধ্য-বাধকতা রয়েছে, সেগুলো আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পূরণ করছি।’
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে মাসুদ মোমেন বলেন, মার্কিন পক্ষ কিছু আলোচনা করেছে। আমরা বলেছি বাংলাদেশ মানবাধিকার সংক্রান্ত সব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সেগুলোর সমাধান করে।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশে বিভিন্ন বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও সহযোগিতা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেটি যেন অব্যাহত থাকে এমনটি বাংলাদেশ চায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা চেয়েছি আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর যে সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতা, সেটি যেন অব্যাহত থাকে। র্যাবের ওপর আপাতত তাদের নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু আমাদের পুলিশ বাহিনী আছে, নির্বাচন কমিশন আছে, বিজিবি, কোস্টগার্ড– এদের সবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা আছে। আমাদের আর্মি-টু-আর্মি বিভিন্ন মহড়া আছে। সেগুলো অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতে আরও জোরদার করা যাবে।’
বৈঠকে জ্বালানি নিরাপত্তা ও সাইবার নিরাপত্তাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রও এই অঞ্চলে কোনো নির্দিষ্ট দেশের আধিপত্য চায় না। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল অবাধ, মুক্ত, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে তারা অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।’
এদিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ৮ সেপ্টেম্বরই নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সেখানে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, ভারত সফরের প্রথম দিনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। নয়াদিল্লিতে ওই দিন সন্ধ্যায় দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে তিস্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে আলোচনা করবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার সময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমাদের দ্বিপক্ষীয় অনেক ইস্যু রয়েছে। এগুলোর সব নিয়ে আলাপ হবে। আমাদের কানেক্টিভিটি ইস্যু আছে, তিস্তার পানির বিষয়ে কথা বলব। এরপর এনার্জি সিকিউরিটি, ফুড সিকিউরিটি নিয়ে আলাপ হবে। দু’দেশের মধ্যে এখন প্রচুর প্রজেক্টও রয়েছে, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলাপ হবে। পুরো দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলাপ করার সুযোগ হবে না। তারপরও যত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে সেগুলো নিয়ে আলাপ হবে।’
দিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকায় আসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ১০ সেপ্টেম্বর তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। এছাড়া দিল্লি সম্মেলনে যোগ দেয়ার আগে ৭-৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ ৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে হবে। সেদিন দুপুরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী দিল্লি পৌঁছাবেন। ওইদিন বিকালেই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। আর ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠক হবে।
ঢাকা সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধের দ্রুত শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করার বিষয়ে অনুরোধ করবে বাংলাদেশ।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বের যে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সমস্যার পর থেকে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। খাদ্য, জ্বালানি, সার নিরাপত্তা, নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমাদের যে সমস্যা সেগুলো আমরা তুলে ধরব। আমরা আশা করব যে, রাশিয়াকে আমরা নিশ্চিত অনুরোধ করতে পারি যে, দ্রুত এটির শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়।’