জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর)
যশোরের কেশবপুরে সরকারি হাসপাতালেপ্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সমিতি গঠন করা নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে।
শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সরকারি হাসপাতালের হল রুমে এই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতি গঠন করা হয়। সেখানে আগামি তিন বছরের জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয় কেশবপুর সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক আজিজুর রহমান ও কপোতাক্ষ সার্জিক্যাল ক্লিনিকের মালিক মিজানুর রহমান বাবুকে, এছাড়া সহ-সভাপতি মর্ডান হাসপাতালের মালিক রবিউল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিরা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মোস্তফা কামাল, কোষাধ্যক্ষ মাইকেল হাসপাতালের শাহারিয়ার হাবিবকে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই সমিতি গঠনের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চাকুরিজীবীদের কারো কারো রয়েছে ব্যক্তিমালিকানা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠনে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার উপস্থিতি ও হাসপাতালের হল রুমে এমন অনুষ্ঠান দেখে অনেকেই কেশবপুরের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে চিন্তিত। কেননা, ইতিমধ্যে কেশবপুরে ব্যাঙের ছাতার মত যত্রতত্র নামে বেনামে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যেখানে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার নামে প্রতিনিয়ন রোগীর জীবন নিয়ে খেলা করা হয়। এই সব বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতালের একচেটিয়া ব্যবসা সিজারিয়ানের আপারেশন করা। অন্য দিকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি,এক্সে, রক্ত,প্রসাবের পরীক্ষা সহ বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা করে থাকে। তবে সব প্রতিষ্ঠানে নেই দক্ষ জনশক্তি, পরীক্ষা নিরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি। যে কারণে অধিকাংক ক্ষেত্রে রোগীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানে অকর্ষণীয় মূল্য প্যাকেজে অবাধে চলে সিজারিয়ানের কাজ। ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে অনেক ক্ষেত্রে খরচ বাঁচাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অদক্ষ জনবল দিয়ে সিজারিয়ানের কাজ করে থাকে। যে কারণে অনেক প্রসূতির অকাল মৃত্যু পথের যাত্রী হতে হয়। পরিবারে নেমে আসে চরম ভোগান্তি। নব জাতক শিশু হারায় তার মাতৃস্নেহ। এমন নানাবিধ অভিযোগ, অনিয়মের জের ধরে কেশবপুরের হাতে গোনা দুই একটি ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সব কয়টি প্রতিষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা প্রসাশন বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো অদৃশ্য শক্তি বলে বা স্বাস্থ্য বিভাগের অসৎ ব্যক্তির দারস্থ হয়ে বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলো রাতারাতি চালুও হয়ে থাকে। এমন সব প্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে কমিটি গঠন করা মানে সংঘবদ্ধ ভাবে অনিয়ম চালিয়ে যাওয়া বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
সরকারি হাসপাতালের হল রুমে বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানা ক্লিনিকের মালিক সমিতি গঠন করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত জানতে চাইলে, জেলা সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এটা ঠিক করেনি, এরকম হওয়ার কথা না। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি বলেন, 'তিনি অনুষ্ঠান শেষের দিকে হল রুমে গিয়েছিলেন, মালিকদের আগে কোনো কমিটি ছিলো না। কমিটি হওয়াতে তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।তিনি তাদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
অপরদিকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো তদারকি না করে তাদের ঢাল হয়ে এ ধরনের কাযক্রমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখোমুখি।