একজন শীর্ষ মানের খেলোয়াড় তার ফুটবল ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটাবেন ইউরোপের কোনো ক্লাবে। আর ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে পাড়ি জমাবেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস), বর্তমান সময়ে ফুটবলারদের ক্যারিয়ার গ্রাফটা এমনই। আর তাই অনেকে এমএলএসকে ‘ফুটবলারদের বৃদ্ধাশ্রম’ বলে প্রায়ই টিপ্পনী কাটেন। সাম্প্রতিক অতীতের দিকে তাকালেও অনেক বড় বড় নাম রয়েছে যারা শেষ সময়টা যুক্তরাষ্ট্রে খেলেছেন। এদের মধ্যে আছেন ডেভিড বেকহ্যাম, থিয়েরি অঁরি, গ্যারেথ বেল, ডেভিড ভিয়া, দিদিয়ের দ্রগবা, ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ওয়েইন রুনি কিংবা কাকা।
গেল বছরের শেষ দিকে আর্জেন্টিনাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জেতানো লিওনেল মেসি ক্লাব ফুটবলে গেল কটা মাস ভুলে যাওয়ার মতোই সময় পার করেছেন। বয়সটাও পড়ন্ত বেলায়। তবুও বিশ্বকাপ জেতার মাত্র মাস ছয়েকের ব্যবধানে আর্জেন্টাইন মহাতারকা ইউরোপ ছাড়বেন এটা বিশ্বাস করতে পারেননি অনেকেই। তবে শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্যি হয়েছে। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমেরিকার ক্লাব ইন্টার মায়ামিতেই যাচ্ছেন মেসি।
প্রচলিত আছে, ইউরোপ ছাড়া মানেই অবসরের পথে এক পা বাড়ানো। ৩৬ বছর বয়সে ইউরোপ ছেড়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। মেসি ছাড়লেন ৩৫ বছর বয়সে। অবশ্য বার্সেলোনার ফেরার গুঞ্জন সত্যি হলে আরও কিছুদিন ইউরোপে থাকতেই পারতেন মেসি। দলবদল আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিল পুরনো ক্লাব বার্সেলোনার নাম। ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্লাব থেকে প্রস্তাব পেলেও মেসি চেয়েছিলেন কেবল বার্সেলোনায় ফিরতে।
সে প্রসঙ্গে আর্জেন্টাইন মহা-তারকা বলেন, আমি সত্যিই ফিরে আসতে চেয়েছিলাম, উদগ্রীব হয়ে ছিলাম ফেরার জন্য। কিন্তু, আমি চলে যাবার সময় যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি চাচ্ছিলাম না। আমার ভবিষ্যৎ অন্য কারো হাতে ছেড়ে দিতে চাই না। আমি শুনেছি লা লিগা অনুমোদন দিয়েছিল, কিন্তু তারপরও অনেক কিছু করতে হতো। আরও বলেন, ‘শুনেছিলাম, (আমার জন্য) বার্সেলোনাকে খেলোয়াড় বেচতে হবে বা খেলোয়াড়দের বেতন কমাতে হবে। আমি এর ভেতর দিয়ে যেতে চাইনি।’
হিলালের টাকা বস্তা ঠেলে কম বেতনে কেন আমেরিকায় মেসি?
বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন বাদ দিলেও অন্যদিকে ‘টাকার বস্তা’ নিয়ে মেসির অপেক্ষায় ছিল সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আল হিলাল। দুই মৌসুমে তাকে ১ বিলিয়ন ইউরো দিতে চেয়েছিল ক্লাবটি। পরে সেটি বাড়িয়ে নাকি ১.৬ বিলিয়ন করেছিল। তাও সেখানে যাননি মেসি। এ প্রসঙ্গে আর্জেন্টাইন তারকা বলেন, টাকা আমার জন্য কখনোই সমস্যা (বাধা) ছিল না। তেমন হলে আমি সৌদিতে যোগ দিতাম।
ওদিকে নতুন ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি ও বেতন নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’ বলছে, মেসির সঙ্গে ইন্টার মায়ামির চুক্তি হবে তিন মৌসুমের। আমেরিকান ক্লাবটি মেসিকে মৌসুমে ১০০ মিলিয়ন ইউরো বেতন দেবে বলেই গুঞ্জন। কোন কোন সংবাদমাধ্যম দুই মৌসুমের চুক্তির কথা বলেছে এবং মৌসুমে ৫০ মিলিয়ন ইউরো বেতন উল্লেখ করেছে। সদ্য সাবেক ক্লাব পিএসজি থেকেই ১০০ মিলিয়নের কাছাকাছি বেতন পেতেন মেসি।
তবে বেতন ছাড়াও ইন্টার মায়ামিতে উপার্জনের আরও কিছু সুযোগ থাকছে মেসির। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানিয়েছে, অ্যাপল ও অ্যাডিডাস থেকেও আয় করবেন মেসি। দুটি প্রতিষ্ঠান মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এমএলএসের ম্যাচগুলো দেখায় অ্যাপল টিভি প্লাস। নতুন সাবস্ক্রাইবারদের ম্যাচ দেখিয়ে যে আয় হবে, সেখান থেকে একটি অংশ মেসিকে দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছে অ্যাপল ও এমএলএস। প্রায় ১০ বছরের জন্য আড়াই বিলিয়ন ডলারের চুক্তি রয়েছে অ্যাপল ও এমএলএসের।
তারা আরও জানিয়েছে, খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে মেসি যেন এমএলএসে কোনো দলের মালিকানার অংশীদার হতে পারেন, ইন্টার মায়ামির সঙ্গে চুক্তিতে সেই সুযোগও রাখা হবে। লস অ্যাঞ্জেলস গ্যালাক্সি ডেভিড বেকহ্যামের সঙ্গে চুক্তিতে এমন সুযোগই রেখেছিল এবং পরে মিয়ামি কিনে নেন ইংল্যান্ডের সাবেক এই মিডফিল্ডার। তবে মেসির সঙ্গে মিয়ামির চুক্তি যেহেতু এখনো সম্পন্ন হয়নি, তাই যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে সাতবারের বর্ষসেরা এই ফুটবলার কোন কোন খাত থেকে কী পরিমাণ অর্থ আয় করবেন, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে, আসন্ন ২০২৪ কোপা আমেরিকার আসর বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ টুর্নামেন্টটিতে মেসির খেলা নিশ্চিত। এছাড়া ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক হলেও বেশিরভাগ ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। এছাড়া মেসির সঙ্গে ইন্টার মায়ামিতে আর্জেন্টাইন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সতীর্থ লিয়ান্দ্রো পারেদেস ও ডি মারিয়ারা যোগ দিতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লিগে খেলাকে সেজন্যও হয়তোবা বেশি যৌক্তিক মনে করেছেন।