থাইল্যান্ডের নির্বাচন: সাড়া জাগাচ্ছেন পেতংতার্ন

থাইল্যান্ডে আগামী সপ্তাহেই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে তুলনামূলক তরুণ প্রার্থীরা ভোটারদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।

সিনাওয়াত্রা পরিবার থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে অতীতে তাদের দল পুয়ে থাই পার্টি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে। পরিবার ও দলের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আসন্ন নির্বাচনেও সাফল্য পেতে চান পেতংতার্ন। তার দল মূলত দেশটির শ্রমজীবী মানুষের ভোট টানতে চাইছে।

পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার বয়স এখন ৩৬ বছর। কিছুদিন আগেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাই নির্বাচনী প্রচারণার চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি জায়গায় জায়গায় ঘুরে জনসংযোগ ততটা করতে পারেননি। তবে লাল রঙের পোশাক পরে, যা তার দল পুয়ে থাই পার্টির ব্যবহৃত রং, তিনি রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতাল থেকে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং মাই এলাকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগতভাবে ওই অনুষ্ঠানে হাজির না হতে পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে দলটির স্থানীয় কর্মী-সমর্থকরা পেতংতার্নের এই ভার্চুয়াল উপস্থিতিকেই স্বাগত জানিয়ে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।

চিয়াং মাই এলাকাটি পেতংতার্নের বাবা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার জন্মস্থান। তিনিই সম্ভবত দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ এবং তাকে ঘিরেই দেশটির রাজনীতিতে সবচেয়ে মেরুকরণ হয়েছে সাম্প্রতিক বছরগেুলোতে। ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতাচ্যুত হন। একই পরিণতি হয়েছিল ২০১৪ সালে তার বোন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার। কারাদণ্ড এড়াতে দুজনই দেশের বাইরে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন এখন। তাদের মিত্ররা বলছেন, রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তাদের মিথ্যা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

থাকসিন, ইংলাক ঘুরে দলের দায়িত্ব এখন থাকসিনের ছোট মেয়ে পেতংতার্নের কাঁধে এসেছে। জনগণকে পূর্বসূরিদের মতোই পুরোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এসব নির্বাচনী অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিতে ভর্তুকি, দীর্ঘপ্রতিশ্রুত উচ্চগতিসম্পন্ন রেল যোগাযোগব্যবস্থা এবং বন্যা ও খরা মোকাবিলায় অবকাঠামো নির্মাণ প্রভৃতি।

বাবা থাকসিন যখন রাজনৈতিক সংকটের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ হারান, তখন পেতংতার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। সেই সময় রাজনৈতিক অস্থিরতায় গোটা থাইল্যান্ড উত্তাল হয়ে উঠেছিল। দেশটির উত্তর ও উত্তর-পূর্বঞ্চলের গ্রামীণ ভোটারদের কাছে ২০০১ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসা থাকসিন ছিলেন একজন নায়ক। তিনিই প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি ভোটার হিসেবে গ্রামীণ জনসাধারণের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মতো ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এতে গ্রামীণ জনসাধারণের জীবনে সত্যিকারের পরিবর্তন এনেছিল। সেই থেকে পুয়ে থাই পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও সিনাওয়াত্রা পরিবারের জনপ্রিয়তায় ধস নামেনি। বর্তমানে পুয়ে থাই পার্টির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গ্রামীণ এলাকাগুলোয় পেতংতার্নের সমর্থকরা ক্লান্তিহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের আশা থাকসিন ও ইংলাক যেভাবে অভূতপূর্ব জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন, পেতংতার্নকেও জনগণ সেভাবেই গ্রহণ করবে।

রাজনীতিতে নবাগত পেতংতার্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০০১ সাল থেকে তিন দফায় থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে পুয়ে থাই পার্টি যেসব কাজ শেষ করতে পারেনি, এবার তিনি সেগুলো শেষ করতে চান। ওই তিনবারই থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রভাবিত আদালতের রুলিং এবং সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় সিনাওয়াত্রার দল।

পুয়ে থাই পার্টির স্লোগান হচ্ছে, ‘বড় চিন্তা, দক্ষ কাজ’। ২০১৪ সালের প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশটির যে অবস্থা, সেখান থেকে সংস্কারের কথা বলছে পেতংতার্নের রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সেগুলোর ‍সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।’

নির্বাচনী প্রচারকাজ পুরোদমে চলছে। গত সপ্তাহে সন্তানের জন্ম দেয়ার পর পেতংতার্ন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তবে তিনি রাজনৈতিকভাবে দেশ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞ কি না, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন।

More From Author

জুনে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে জয়ার ‘অর্ধাঙ্গিনী’

প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচন নয়, মান্নাকে আশ্বস্ত করলেন খালেদা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *