এই মুহূর্তে ইউরোপের ফুটবলে গোলবন্যা দেখার সবচেয়ে বড় মঞ্চগুলোর একটিই বুঝি হয়ে উঠেছে অ্যানফিল্ড! সেটা লিভারপুলের পক্ষেই হোক বা বিপক্ষে।
এই তো, গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে লিভারপুল। তার দিন পনের আগেও চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচে সাত গোল দেখেছিল অ্যানফিল্ড, যদিও লিভারপুলের জন্য তা দুঃস্বপ্নের হয়ে থেকেছে। দুই গোলে এগিয়ে গিয়েও সেদিন বল পায়ে রেয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের অবিশ্বাস্য শ্রেষ্ঠত্বের সামনে নাকাল লিভারপুল হেরেছিল ৫-২ গোলে।
লিভারপুল না হয় সেই দুঃস্বপ্নে প্রলেপ দিয়েছে ইউনাইটেডকে গুঁড়িয়ে দিয়ে, কিন্তু রেয়াল মাদ্রিদ যেন এখনো সেই ১৫ দিন আগের ম্যাচেরই স্মৃতিমেদুরতায় বিভোর। না হলে এরপর একের পর এক ম্যাচে মাদ্রিদ হঠাৎ এমন গোল-খরায় পড়বে কেন!
গতকাল রাতেও লিগে রেয়াল বেতিসের মাঠে ০ – ০ ড্র করেছে মাদ্রিদ, এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে গোলহীন বেনজেমা-মদরিচরা। লিভারপুলের মাঠ ওই গোলবন্যায় ভাসানোর পর এ নিয়ে তিন ম্যাচে মাদ্রিদ গোল করেছে মাত্র একটি।
একেকটি ম্যাচে গোলখরা মাদ্রিদের মৌসুমকেও শঙ্কায় ফেলে দিচ্ছে। অ্যানফিল্ডের ওই ম্যাচের পর আতলেতিকো মাদ্রিদের মাঠে ৮৫ মিনিটে তরুণ আলভারোর গোলে ১-১ সমতা নিয়ে ফিরেছিল মাদ্রিদ, সেদিন তবু ড্র-টা অত ধাক্কা হয়ে আসেনি। কারণ, পরের দিনই বার্সেলোনা হেরে গিয়েছিল আলমেরিয়ার ম্যাচে। তাতে লিগে শীর্ষে থাকা বার্সার সঙ্গে মাদ্রিদের পয়েন্ট ব্যবধান নেমে এসেছিল ৭-এ। মাদ্রিদে তখন জোর বিশ্বাস, লিভারপুল ম্যাচের মতো লিগের শিরোপাদৌড়েও ঠিকই ফিরে আসবে ‘কামব্যাক কিংস’ মাদ্রিদ।
কিন্তু এরপর গত বৃহস্পতিবার নিজেদের মাঠে কোপা দেল রে-র সেমিফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনার কাছেই ১-০ গোলে হেরেছে মাদ্রিদ, দ্বিতীয় লেগে ক্যাম্প ন্যু-তে না জিতলে সেখানে একটি শিরোপার আশা হয়ে যাবে।
এর মধ্যে গতকাল বেতিসের মাঠে গোলশূন্য ড্র-তে লিগের শিরোপাদৌড়েও আবার পিছিয়ে গেল মাদ্রিদ। গতকাল রাতে বার্সেলোনা দশজনের দল নিয়েও কষ্টেসৃষ্টে ১-০ গোলে জিতেছে ভালেন্সিয়ার মাঠে। এরপর চাপ ছিল মাদ্রিদের ওপর – বেতিসের মাঠে না জিতলে পয়েন্টের ব্যবধান আরও বাড়বে।
গোলখরার প্রভাবে পয়েন্টের ব্যবধান শেষ পর্যন্ত বেড়েই গেল। লিগে আর ১৪ ম্যাচ বাকি, বার্সার চেয়ে এখনো ৯ পয়েন্ট পিছিয়ে মাদ্রিদ। শীর্ষে থাকা বার্সার পয়েন্ট ৬২, মাদ্রিদের ৫৩।
মাদ্রিদ উইঙ্গার লুকাস ভাসকেস যদিও এখনো কোনো শিরোপার আশারই শেষ দেখেন না। বেনিতো ভিয়ামারিনে কাল ম্যাচ শেষে তার কণ্ঠে জোরাল উচ্চারণ, ‘আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। মাত্র মার্চ মাস চলছে, এখনো অনেক ম্যাচ বাকি আছে। সমর্থকদের অনুরোধ জানাই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখার জন্য। যে তিন শিরোপার দৌড়ে আছি (লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা দেল রে), তিনটির জন্যই আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব।’
৪-৪-২ ছক, ডান উইংয়ে ভালভের্দে, বাঁ উইংয়ে ভিনিসিয়ুস, আক্রমণে বেনজেমার পাশে রদ্রিগো – মাদ্রিদকে কাল অনুমিত ঢংয়েই সাজিয়েছেন আনচেলত্তি। মিডফিল্ডে ক্রুসের সঙ্গে ছিলেন চুয়ামেনি। দুই উইংব্যাক হিসেবেও অবশ্য দুই মিডফিল্ডার খেলেছেন, যদিও দুজনেরই সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে – লেফটব্যাকে কামাভিঙ্গা তো গত মাস দুয়েকে নিয়মিতই, রাইটব্যাকে ভাসকেস নিয়মিত ছিলেন জিদানের সময়ে। বেতিসেরও একাদশেও অবশ্য চোটের কারণে ছিলেন না দুই সৃষ্টিশীল প্লেমেকার নাবিল ফেকির ও সের্হিও কানালেস।
ম্যাচের শুরু ও শেষে দাপট বেশি ছিল মাদ্রিদের। বেনজেমার ফ্রি-কিক একবার সতীর্থের গায়ে লেগে দিক বদলে জালেও ঢুকেছিল। কিন্তু ভিএআরে পরে দেখা যায়, আসলে সেই সতীর্থ – আন্টোনিও রুডিগারের হাতে লেগে বল দিক বদলেছে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভিনিসিয়ুসের পাসে দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বেনজেমা, কিন্তু বেতিস গোলকিপার ক্লদিও ব্রাভো তা ফিরিয়ে দেন। গোল মিস করেছেন ভিনিসিয়ুসও। পাল্টা আক্রমণে মাদ্রিদকে বেশ কয়েকবার ভয় দেখানো বেতিসের বোর্হা ইগলেসিয়াসের শট শেষ দিকে ফিরিয়ে দেন মাদ্রিদ গোলকিপার কোর্তোয়াও।