পরদিন ছিল কোরবানির ঈদ। এর আগের দিনই আমার পোলারে কোরবানি করে দিল তারা। আমার মানিক, আমার বুকের ধন কাইড়া নিছে তারা। আমার পোলারে খুন কইরা তারা আবার আমাকে মামলাও করতে দেয়নি।’
এভাবে আহাজারি করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন তুচ্ছ ঘটনায় ছুরিকাঘাতে নিহত কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নূরপুর গ্রামের মেহেদী হাসান শান্তর মা মরিয়ম বেগম। সোমবার জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে শান্ত হত্যায় জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে শান্তর বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে নাই। আমার ছেলেকে অনিকের নির্দেশে খুন করা হয়েছে। অনিকসহ আসামিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে। আর আমার ছেলে কবরে। এই কষ্ট কীভাবে আমি দেশের মানুষকে বুঝাব। আমি বাবা হিসেবে ছেলের খুনের মামলা করতে গেলে, তারা আমার বাড়িতে এসে হুমকি দেয় মামলা করলে আমাকেও শান্তর মতো কুপিয়ে মারবে। বহু জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে পরে মামলা করেছি। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
২০২২ সালের ৯ জুলাই বিকেলে দেবিদ্বার উপজেলার নূরপুর শাহ ফাতেমি ইবতেদায়ী হাফেজিয়া নূরানী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় একটি সভা ছিল। সভার আগে নূরপুর গ্রামের আমেরিকা প্রবাসী জসীম উদ্দিনের ছেলে সাজিদের সঙ্গে স্থানীয় সাদ্দাম, আল আমিন, সগির ও বায়েজিদের তর্ক হয়। পরে এ নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তারা। ওই সময় সংঘর্ষে শান্তসহ পাঁচজন আহত হন।
ছরিকাঘাতে গুরুতর আহত শান্তসহ অন্যদের দ্রুত দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরদিন শান্তর বাবা জাকির হোসেন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় আল আমিন, সাদ্দাম, ছগির, বায়েজিদ, সিরাজ ও মোখলেছসহ ছয়জনকে। এ ছাড়া আরও ১৫-২০ অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মানববন্ধনে শান্তর আত্মীয় স্বজনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কুমিল্লা উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু কাউসার অনিক ও হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি সাদ্দামসহ বাকি আসামিদের বিচার দাবি করেন।
জানতে চাইলে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, ঘটনার পর মামলা হয়েছে। তখন পুলিশ অনেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।