যশোর মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে। তবে অভিযোগ দায়ের করায় এখন হুমকির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সমিতির সহসম্পাদক জহির উদ্দিন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নে সমিতির সদস্য সংখ্যা ৭৫। সংস্থাটি ১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমান সভাপতি মোজাম্মল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন কমিটির বাকি ৯ জনের স্বাক্ষর নকল করে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে রেজল্যুশন তৈরি করেন। তারা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক যশোর শাখায় সঞ্চয় থাকা ১ কোটি টাকার বিপরীতে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ লাখ টাকা সমিতির নামে ঋণ হিসেবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে হাতে লেখা স্লিপের মাধ্যমে সমিতির কার্যালয় থেকে আরও ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন তারা। এক বছরের বেশি সময় ধরে গোপন থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিষয়টি জানাজানি হয়।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জমি ক্রয়ের নামে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর আইএফআইসি ব্যাংক যশোর শাখা থেকে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মিলে আরও ৪২ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু ইউনিয়নের নামে কোনো জমি তারা ক্রয় করেননি। নিয়ম অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ও নিবন্ধকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু সেই অনুমোদনের কোনো তোয়াক্কা-ই করেননি তারা।
তদন্ত কমিটির প্রধান জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি মোজাম্মল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। তাদের অনিয়ম তদন্তে ৭ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করে বিভাগীয় কার্যালয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন যশোর জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক ইকরামুল হক ও ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পরিদর্শক জিল্লুর রহমান। তদন্তে তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এ বিষয়ে দুয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক ইকরামুল হক বলেন, চিঠি পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করে কমিটি। তদন্তে সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্তরা নিজেরাও তাদের ভুলের কথা স্বীকার করেছেন। ২০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু কয়েকটি কারণে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। তবে দ্রুতই প্রতিবেদন দেয়া হবে।
জানতে চাইলে মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি অভিযুক্ত মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজে টাকা উত্তোলন করা যাবে না, তা আমাদের জানা ছিল না। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা টাকা ফেরত দিচ্ছি। কিছু টাকা ফেরত দিয়েছি।’
অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় তাদের পক্ষ নিয়ে কয়েকজন হুমকি দিচ্ছে বলে যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন সমিতির সহসম্পাদক জহির উদ্দিন।
এ বিষয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালিদ হোসেন বলেন, অভিযোগটির বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। ভুক্তভোগীরাও গতকালও তার কাছে এসেছিলেন। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।