ছয় বছর পর দিয়াজ হত্যা মামলার প্রতিবেদন

মরদেহ উদ্ধারের ৬ বছর পর ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে আদালতে নারাজি আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন দিয়াজের বোন অ্যাডভোকেট জোবায়দা চৌধুরী নিপা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় এই প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়া।

প্রতিবেদন জমার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক জাকের হোসাইন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘সন্ধ্যায় আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। মামলার পরবর্তী তারিখে এটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।’

প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেদন নিয়ে দিয়াজের বোন জোবায়দা চৌধুরী নিপা বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগে বাদী পক্ষকে জানানোর কথা। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্টোটি করেছেন, বাদীকে না জানিয়ে জানিয়েছেন আসামিদের। আসামিদের ফেসবুক পোস্ট দেখেই আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। তারা ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে ‘দিয়াজের আত্মহত্যা মামলা নিষ্পত্তির জন্য আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে।’ দিয়াজের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কথা বলা আছে, চূড়ান্ত ময়নাতদন্তেও হত্যার কথা বলা আছে। কাজেই প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে আমরা আদালতে নারাজি দেব।’

২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে নিজ বাসা থেকে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দিয়াজ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন।

শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও চবি ছাত্রলীগের একাংশ দাবি করে আসছিলেন, তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে হত্যা’ করা হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের দুই দিন পর ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তাকে হত্যার আলামত মেলেনি বলে ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে দিয়াজের পরিবার।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। তাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সেসময়ের সভাপতি আলমগীর টিপু, তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা জামশেদুল আলম চৌধুরী, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে আসামি করা হয়।

দিয়াজ ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর সবাই সাবকে সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার ঠিকাদার জি কে শামীমকে দিয়াজের পরিবারের পক্ষ থেকে আসামি করা হলে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

সে সময় জাহেদা আমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে ‘হত্যার আলামত’ আছে।

আদালতের নির্দেশে হাটহাজারী থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। ওই সময়কার ওসি বেলাল উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিজেই তদন্ত শুরু করেন। পরে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডির কাছে। সিআইডির প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান তদন্ত শুরুর পর বদলি হন। এরপর আরও দু’জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তিত হয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়ার হাতে যায় মামলাটি।

More From Author

বিশ্ব ব্যাংকের নেতৃত্বে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙ্গাকে বাইডেনের মনোনয়ন

বাবা ইউক্রেনে, মা রাশিয়ায়, মেয়ে লন্ডনে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *