অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে ফের অভিযান

প্রচুর অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকেছে বলে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে সরকার। অনেকে অস্ত্র রাখার জাল লাইসেন্স বানিয়ে অস্ত্র বহন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় আকারে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গত রোববার আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এই কমিটির সভা হয়। পরে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্ট এসেছে যে প্রচুর অবৈধ অস্ত্র দেশে আসছে। অনেকে অস্ত্রের জাল লাইসেন্স বানিয়ে নিয়েছে। লাইসেন্সের সত্যতা যেন যাচাই করা হয়, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বড় আকারে যেন অভিযান চালানো হয়; এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক থাকবে। চোরাকারবারি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। বেআইনি অস্ত্র অ্যালার্মিং।

এর আগে অস্ত্র উদ্ধারের নামে বিরোধী দলের লোকদের ধরা হয়েছে, এবারও ওই রকম অভিযান চালানো হবে কি না- একজন সাংবাদিক এই প্রশ্ন করেন মন্ত্রীকে। উত্তরে তিনি বলেন, বিরোধী দলের জন্য করা হচ্ছে বলে যে কথা বললেন, সেটি ঠিক না। ধরপাকড় করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ছিল তাদের। এটা পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। আন্দোলনের কারণে কাউকে নতুনভাবে ধরা হয়েছে, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। অস্ত্র যদি না পায় অভিযোগ তো সঠিক হলো না।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা দেশে ফিরতে চায় না জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাদের এক কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সব সময় মাথায় ছিল দেশ স্বাধীন হলেই ফেরত আসব। কিন্তু রোহিঙ্গাদের এখন যে মানসিকতা তারা থেকে যেতে চায়। তারা তো আরেক দেশের নাগরিক। তাদেরকে তাদের দেশে সসম্মানে, পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে যেন ফেরত নেয়া হয়, সে বিষয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এখানে উচ্ছৃঙ্খলতা, মারামারি, গোলাগুলি বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আরও তৎপর হবে।

রোহিঙ্গা এলাকায় এনজিওরা কত টাকার কার্যক্রম পেয়েছে সেসব খতিয়ে দেখা হবে। কারণ আইনে আছে টাকা বাংলাদেশে যখন ঢুকবে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ঢুকবে। এসব তথ্য-উপাত্ত তারা দিয়েছে কি না? হিসাব দেয় কি না? কত টাকা রোহিঙ্গাদের পেছনে ব্যয় করে, আর এসবের সঙ্গে যারা জড়িত তারা কত পায় এসব যাচাই করে দেখা দরকার। বেতন-ভাতার বাইরেও তারা খরচ করে কি না এসব দেখা হবে। এরা সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থিদের অর্থায়ন করছে কি না, সেই অভিযোগের সত্যতাও আইনানুগভাবে যাচাই করা হবে।’

বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় বাংলাদেশে না হওয়ায় খেদ প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা কমিটি। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম যারা নিয়ন্ত্রণ করেন আইনশৃঙ্খলা কমিটি থেকে তাদের বারবার চিঠিপত্র দেয়া হলেও তারা তেমনভাবে সাড়া দেননি। এর প্রধান কারণ হলো দেশে যেহেতু তাদের কার্যালয় নেই, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ভুয়া আইডি ব্যবহার করে যারা মিথ্যাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও নেয়া হচ্ছে না। সরকারের বিরুদ্ধে বলছে তা নয়, ব্যক্তি ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তারা মিথ্যাচার করছে। আমরা চাই এসব চ্যানেলের কার্যালয় যাতে বাংলাদেশে হয়।

সবার অধিকার আছে, সম্মান আছে, অহেতুক যাতে মিথ্যাচারের শিকার কেউ না হয়। আমরা বলেছি, যারা মিথ্যাচার করছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, কারণ সে থাকে অন্য দেশে। বাংলাদেশে তাদের অফিস বসানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার পরও কেন অফিস হয়নি, এ বিষয়ে তাদের উত্তর আমাদের কাছে যথাযথ মনে হয়নি। ওরা আমাদের ঘোরাচ্ছে। দ্রুত এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে।’

মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের তালিকা হচ্ছে

মাদকসেবী, মাদক বিক্রেতা ও মাদক পাচারকারীদের তালিকা করেছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে এসব তালিকা যাচাই করা হবে। এরপর মাদকসেবী ও মাদক কারবারিদের স্থায়ী তালিকা করবে সরকার।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মাদক জাতির জন্য সবচেয়ে বড় অ্যালার্মিং ব্যাপার। মাদক কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কলাকৌশল আরও বৃদ্ধি করার জন্য বলেছি। মাদক বিক্রেতা, মাদকসেবী, মাদক পাচারকারীদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৈরি করেছে। সচিবের নেতৃত্বে এসব তালিকা ক্রস চেক করে আমরা স্থায়ী তালিকা করব। কারণ অনেকগুলো সংস্থা আছে, তারা তালিকা করবে। অতীতের যে তালিকা তা হালনাগাদ করা হবে। সবার আলাদা আলাদা তালিকা আমরা সমন্বিতভাবে দেখব। তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। কারণ পৃথিবীর সব দেশেই দুর্বৃত্ত থাকে, তাদের একটি তালিকা থাকে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও সন্দেহভাজনদের নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হবে।’

More From Author

মাসে ১২ ডলার গুনতে হবে ফেসবুক ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টের জন্য

বাংলাদেশ থেকে হচ্ছে সার্কের নতুন মহাসচিব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *