রাবিতে শিক্ষার্থীকে মারধর ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে হলকক্ষে আটকে রেখে মারধর এবং ‘শিবির’ তকমা দিয়ে মেরে ফেলার হুমকির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন ওই বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম কৃষ্ণ রায়।

কর্মসূচিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষ্ণ রায়কে শিবির সন্দেহ করা হচ্ছে। যখন সে বলছে সে হিন্দু তখন তারা বলছে ‘তুই তাহলে ইস্কন’। এর মানে হচ্ছে, একটা মেজোরিটি ক্ষমতাসীন দল যখন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে, তখন তাদের এই মেন্টালিটি সমাজের সকল স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে এই ফ্যাসিস্ট রেজিম ঢুকে গেছে। এই অবস্থা শুধু রাবিতে নয়, রুয়েট, কুয়েট ও ঢাবিসহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই কালচার থেকে বেরিয়ে এসে অন্যায়ের সঙ্গে কোনো ধরনের আপস না করে প্রতিবাদ করতে হবে।

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, আজ এমন একটি পরিস্থিতিতে আমরা দাঁড়িয়েছি, এই ঘটনাটি শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, গত কয়েকদিনে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা সোনার বাংলাদেশের গল্প করছি, আমরা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের গল্প করছি। কিন্তু আছি আমরা এই বাংলাদেশে।

আমরা পাতাল রাস্তা বানাচ্ছি, কর্ণফুলীর নিচ দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। ওপর দিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি। পুরো বাংলাদেশ ট্রেনময় করে দিয়েছি কিন্তু আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে থাকতে পারছে না। এই বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশে আমরা অবস্থান করছি।

মামুন হায়দার বলেন, একটা সিটের দাম যদি দশ হাজার টাকা হয়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থী কীভাবে হলে উঠবে? নির্যাতিত শিক্ষার্থী কৃষ্ণের বাবা নেই। কত যুদ্ধ করে এ জায়গায় এসেছে। হলের সিট তার প্রাপ্য অধিকার। অথচ সে যে ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আমরা শঙ্কিত আগামী পাঁচ বছরে কৃষ্ণ রায়ের এই ট্রমা ভাঙবে কীভাবে? এর দায় কে নেবে?’

বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লা হীল বাকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অসাধারণ শিক্ষার্থী আছে, যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করে। আর আমরা নিপীড়ন, নির্যাতন, হুমকি-ধামকি, চাপে-ভয়ে কোণঠাসা হতে হতে এমন পর্যায়ে এসেছি যে, মেরুদণ্ড সোজা হয় না, কষ্ট করে সোজা করতে হয়।

খবরে দেখলাম কৃষ্ণকে শিবির বলে মেরে ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু আমি তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারলাম কৃষ্ণ লাশ হয়ে গেছে। সে এখন মানসিক ট্রমার মধ্যে আছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শুনেছি টর্চার সেল আছে। আর এদিকে আমাদের প্রশাসন আপস মিমাংসায় ব্যস্ত।

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুল ও ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক স্বপ্নীল রহমান।

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

গত রোববার দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলে আটকে রেখে কৃষ্ণ রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে তাকে মেরে ‘শিবির’ বলে চালিয়ে দেয়ারও হুমকি দেয়া হয়। অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম ইসলাম ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমান। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

বহিঃশক্তির আক্রমণ থেকে দেশ রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী গড়া হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৩০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *