বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকিং খাত।
গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের পরিমাণ কমে ৩ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ছয় মাস আগে জুন পর্যন্ত এই তারল্যের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। শতাংশ হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে তারল্য কমেছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, এই ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত, ইসলামী ও বেসরকারি ব্যাংকে তারল্য কমেছে। বিশেষায়িত ও বিদেশি ব্যাংকের তারল্য বেড়েছে। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করলে পুরো ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে জুনে তারল্য সম্পদ ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকগুলোতে জুনে ছিল ৫৬ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ৯ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকে জুনে ছিল ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা, ডিসেম্বরে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা।
বিদেশি ব্যাংকে জুনে ছিল ৪০ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত ব্যাংকে জুনে ছিল ১ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোকে ডলার দিয়ে সহায়তা করেছে। ডলারের প্রয়োজনে ব্যাংকগুলো টাকার বিপরীতে ডলার কিনেছে। দেড় বছর ধরে এই সংকট চলছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক ঋণ বিতরণে অনিয়ম করেছিল। বিষয়টি জানাজানির পর সবার এই ধরনের ব্যাংকের ওপর আস্থা চলে গিয়েছিল। অনেকে এ ধরনের ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। মূল্যস্ফীতির কারণেও অনেকে নগদ টাকা উত্তোলন করেছে। ফলে ব্যাংকে তারল্য কমেছে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে স্বল্প সময়ের জন্য ধার করা অর্থের সুদের হার বা কলমানি রেটও জানুয়ারি মাসে ৭ শতাংশে উঠেছিল। বাজারে নগদ অর্থের টান পড়ায় গত কয়েক মাস ধরেই কলমানিতে টাকা ধার নেয়ার সুদের হার বেড়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ওভারনাইটে টাকা ধার নেয়ার সুদের হার (কলমানি রেট) কিছুদিন আগে ৭ শতাংশে উঠেছিল। এখন অবশ্য তা ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণপত্র বা এলসি খোলার জন্য ডলারের বিপরীতে দেড় লাখ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছিল। যার কারণে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছিল। এখন সেটা কেটে যাচ্ছে