রেলের টিকিট নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। চাহিদা অনুযায়ী ট্রেনের টিকিট না পাওয়া, কালোবাজারিতে টিকিট চলে যাওয়া বা টিকিট ছাড়া যাত্রী পরিবহন– এমন নানা অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে এবার টিকিটিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ হচ্ছে। আগামী ১ মার্চ থেকে এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, রেলের টিকিটিং ব্যবস্থায় তিনটি সেবা যুক্ত হতে হচ্ছে। জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি, টিকিট চেকিংয়ে পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিনের ব্যবহার, অনলাইনে কেনা টিকিটের টাকা অনলাইনেই রিফান্ড করার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে। এসব সেবা আগামী মাস থেকে যুক্ত হবে।
জানা গেছে, টিকিট যার ভ্রমণ তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে এবার টিকিট কেনার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সংযোজন এবং ট্রেনে পিওএস মেশিং যুক্ত করার বিষয়ে বুধবার রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছে রেল মন্ত্রণালয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি ১৫ ফেব্রুয়ারি। সেখানেই বিস্তারিত জানাব আপনাদের’।
এনআইডিতে ট্রেনের টিকিট বিক্রি
আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কেনার আগে প্রত্যেক যাত্রীকে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কেনা যাত্রীদের অনলাইন অথবা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে রেলওয়ের টিকিটিং সিস্টেমে নিবন্ধন করতে হবে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, যাত্রীরা আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্টের মাধ্যমে রেলওয়ের সিস্টেমে নিবন্ধন করতে পারবেন। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার জন্য বড় বড় স্টেশনে একটি করে হেল্প ডেস্কও রাখা হবে।
এদিকে এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ কিছু শর্তও যুক্ত করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। ১২-১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা তাদের বাবা-মায়ের এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করা রেলওয়ের অ্যাকাউন্ট থেকে এককভাবে টিকিট কিনতে পারবে। তবে এসব ক্ষেত্রে টিকিটের ওপরে লেখা নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণের সময় অবশ্যই জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর প্রদান ও পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারবেন।
তা ছাড়া এনআইডি, পাসপোর্ট ও জন্মনিবন্ধন ছাড়া কোনো যাত্রী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ক্রয় করতে পারবে না। ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা পাসপোর্ট বা ছবিসংবলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপরে লেখা যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
ট্রেনে থাকবে পিওএস মেশিন
রেল কর্তৃপক্ষ এবার পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন যুক্ত করতে যাচ্ছে ট্রেনে। এতে বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ বন্ধ হবে। প্রথমদিকে ১০০টি মেশিনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে। এতে বিনা টিকিটের যাত্রীদের যেকোনো জায়গা থেকে অনলাইন বা অফলাইনে নগদ বা ক্যাশ প্রদানের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করা সম্ভব হবে। এতে রেলের রাজস্ব বাড়বে। ট্রেনের টিকিট চেকিং ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে।
এদিকে এই মেশিনটির মাধ্যমে টিকিট অনলাইন বা কাউন্টার থেকে কাটা হয়েছে সেটা যাচাই করা যাবে। একই সঙ্গে জাল টিকিট যাচাই করা যাবে। এই মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে বিনা টিকিটের যাত্রী, জরিমানা ও ভাড়ার হিসাবের স্বচ্ছতা আসবে। পিওএস মেশিনে জিপিএস থাকায় টিটিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
অনলাইনের পাওয়া যাবে টিকিট রিফান্ডের টাকা
এর আগে অনলাইনে কেনা টিকিটের টাকা অনলাইনে রিফান্ড করার ব্যবস্থা ছিল না। অনলাইনেই রিফান্ড করার প্রক্রিয়া চালু করা হলে যাত্রীদের স্টেশনে এসে টিকিট রিফান্ড করার বাধ্যবাধকতা আর থাকবে না। তখন সাধারণ যাত্রীরা ঘরে বসেই টিকিট রিফান্ড করতে পারবে। আগামী মাস থেকে অনলাইনে কেনা টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থাও যুক্ত হচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে একজন যাত্রী রেলসেবা অ্যাপ বা রেলওয়ের টিকেটিং ওয়েব পোর্টালে ঢুকে নিজস্ব আইডিতে টিকিট রিফান্ড অপশনে গিয়ে টিকিটসংক্রান্ত তথ্যাদি দিলে টাকা ফেরত পাবেন।