সম্প্রতি সরকারবিরোধী আন্দোলন বেগবান করতে দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিলে নির্বাচন কমিশন ওই আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে। ফলে সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী সেখানে উপনির্বাচন হবে।
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের আগে কোনো সংসদীয় আসন শূন্য হলে উপনির্বাচন করতে হয়। চলতি একাদশ সংসদের মেয়াদ এখনও এক বছরের বেশি রয়েছে। কাজেই এই আসন শূন্য হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকে আইন অনুযায়ী উপনির্বাচন করতে হচ্ছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি ওই সাতটি আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তবে যে চিন্তা থেকে বিএনপি দলীয় সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন বা দল হিসেবে বিএনপি তাদের পদত্যাগ করতে বলেছিল মাঠের হিসেবে তার কতটা বাস্তব রূপ পাচ্ছে? ইতোমধ্যে শূন্য আসনগুলোতে নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে। এরমধ্যে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (আশুগঞ্জ ও সরাইল) আসনে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য উকিল আব্দুস সাত্তারের উপনির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর। বর্ষিয়ান বিএনপি নেতার এই সিদ্ধান্ত দলটিকে চমকে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বগুড়াতেই দুই বিএনপি নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা এখন বেনামে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, এটা হয় বিএনপির লোক দেখানে পদত্যাগ, নয়তো দলটির ভেতরে নেই কোনো শৃঙ্খলা। তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর সরকারের অনুকম্পায় কারাগারের বাইরে আছেন। আর তার বড় ছেলে তারেক রহমান বর্তমানে লন্ডনে পলাতক। তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে নির্দেশনা দিয়ে দল পরিচালনা করছেন। ফলে তৃণমূলের নেতাদের অনেকেই দলের সিদ্ধান্ত মানছেন না।
আবার অনেকেই বলছেন, এটা বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। প্রকাশ্যে নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতা করলেও, সংসদ থেকে পদত্যাগ করলেও ভেতরে ভেতরে ঠিকই নির্বাচনের প্রস্তুতি চালাচ্ছে।
এদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (আশুগঞ্জ ও সরাইল) আসনে মোটর গাড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বিএনপির সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু আসিফ। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি নেতা বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং বগুড়া-৪ (কাহালু নন্দীগ্রাম) আসনে পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নন্দীগ্রামের সাবেক মেয়র কামরুল হাসান সিদ্দিক জুয়েল নির্বাচন করছেন।
উকিল আব্দুস সাত্তারের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দলীয় নির্দেশ অনুযায়ী তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছায় আবার উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি এর আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং খবর জানার পর বিএনপিও তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে। এখন বিএনপি যেভাবেই ব্যাখ্যা করুক না কেন যে, উকিল আব্দুস সাত্তার আর বিএনপির কেউ নন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন এই তথ্য পাওয়ার পরই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
যেসব জায়গায় বিএনপি দলীয় প্রার্থী আছে তাদের প্রত্যেকেরই অভিযোগ, দল তাদের মূল্যায়ন করেনি। ফলে ভোটারদের কাছে এটাও বিএনপির জন্য নেতিবাচক বার্তা বটে। সাংগঠনিকভাবে যে দলটি দুর্বল অবস্থানে আছে সেটাই প্রমাণ করে এসব প্রার্থী হওয়া দেখে। আর এই দুর্বলতাকে সঙ্গে নিয়েই আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে, তাহলে নিজ দলেই বিদ্রোহীর ছড়াছড়ি পড়ে যাবে এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেকদের।