২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এক ধরনের অতি শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এমন কিছু তরঙ্গ শনাক্ত করেন যা তাঁদের বিস্মিত করে। তাঁদের শনাক্ত করা ওই তরঙ্গের ধরন-ধারণ সব দিক থেকেই ছিল অদ্ভুত।
এ পৃথিবীর বাইরে কোথাও প্রাণ আছে কিনা, বা প্রাণের কোনও ইঙ্গিত আছে কিনা, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক কৌতূহল, অনেক জিজ্ঞাসা, অনেক গবেষণা। তাই এ-গ্রহের বাইরে বিন্দুমাত্র এ ধরনের কোনও সংকেত মিললেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তাঁরা।
তেমন উত্তেজনার ঘটনা ঘটল। হার্টবিটের মতো এক রহস্যময় বেতারতরঙ্গ শনাক্ত করলেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা একে বলেছেন, 'ফাস্ট রেডিও বার্স্ট' বা 'এফআরবি'। বিজ্ঞানীরা বলছেন, হৃদ্স্পন্দনের অনুরূপ সংকেত প্রায় এক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এক গ্যালাক্সি থেকে এসেছিল। তবে তাঁদের কাছে এ সংকেতের প্রকৃত অবস্থান ও কারণ এখনও খুব পরিষ্কার নয়। বুধবার এই রেডিও বিস্ফোরণের বিস্তারিত তথ্য 'নেচার' পত্রিকায় প্রকাশও করেছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা।
'ফাস্ট রেডিও বার্স্ট' বা 'এফআরবি' হল অজানা উৎস থেকে উৎপন্ন হওয়া বেতার তরঙ্গ; এমন তরঙ্গ মিলিসেকেন্ড সময়ে যার তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। আর কয়েক মিলিসেকেন্ড পরেই এগুলি পুরোপুরি মিলিয়ে যায়। তবে এরই মধ্যে কিছু অংশ আবার একেবারে হারিয়ে যায়ও না। এর মোটামুটি ১০ শতাংশের মতো তরঙ্গের পুনরাবৃত্তি ঘটে। সেই পুনরাবৃত্ত তরঙ্গের প্যাটার্ন বা ধরনটাই এবার ওই হৃদস্পন্দনের মতো ঠেকেছে গবেষকদের কানে।
২০০৭ সালে প্রথম এই 'এফআরবি' শনাক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। এরপর থেকে মহাবিশ্বের বিভিন্ন দূরবর্তী উৎস থেকে আসা এই তরঙ্গ অনেকবারই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানীদের পক্ষে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এবং স্পেস রিসার্চের গবেষক ড্যানিয়েল মিচিলি বলেন, ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সিএইচআইএমই টেলিস্কোপ (এক ধরনের অতি শক্তিশালী টেলিস্কোপ) ব্যবহার করে এমন কিছু তরঙ্গ শনাক্ত করেন যা তাঁদের বিস্মিত করে। তাঁদের শনাক্ত করা ওই ফাস্ট রেডিও বার্স্ট সব দিক থেকেই ছিল অদ্ভুত। এই সংকেতটির নাম দেওয়া হয়েছিল-- 'এফআরবি ২০১৯১২২১এ'। এটি তিন সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। এবং সাধারণ এফআরবির চেয়ে এটি হাজার গুণ দীর্ঘ ছিল। এই প্রসঙ্গে মিচিলি'র ব্যাখ্যা-- এটি অস্বাভাবিক ছিল। এটি দীর্ঘও ছিল। তিন সেকেন্ড স্থায়ী এই বিস্ফোরণ ছিল পর্যায়ক্রমিক। এটি সেকেন্ডের প্রতি ভগ্নাংশে বুম বুম বুম শব্দ করছিল। সেই শব্দের প্যাটার্ন অনেকটা হৃদ্স্পন্দনের মতো। এরপর থেকে অবশ্য ওই বিস্ফোরণের আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি বলেই জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
কার হৃদয়ের চঞ্চলতা ওই সুদূর মহাকাশে? কার হৃদযন্ত্রের ধুকপুকুনি শোনা যায় সেখানে? আপাতত এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজবেন মহাকাশ বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা।